romantic story নবীন ভোরের নবীন ঊষা এক নতুন পরী আর অভি কে সাদর আহ্বান জানায়। দু’জনের মনে আর কোন পরিতাপ নেই। পরীর মুখের মিষ্টি হাসি আর উচ্ছলতা অভিকে যেন নিয়ে যায় এক নতুন দিগন্তে। দুপুরের খাওয়া একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে নেয় ওরা, এবারে ফেরার পালা। সারাটা রাস্তা দু’জনে এদিক ওদিকের গল্প, ভ্রমণের গল্প করে কাটিয়ে দেয়। বল্বিন্দার ফেরার সময়ে সেই একই রাস্তা ধরে, ফাগু থেকে চায়েল হয়ে ছোটো রাস্তা।
পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “কালকে তোমার ফেরার ফ্লাইট কটায়?”
অভি, “আমি যদি আজ রাতে শুরু করি তাহলে কাল সকালের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব, দেখি যদি সকালের ফ্লাইটটা ধরতে পারি তাহলে দুপুরের মধ্যে বাড়ি না পেলে দুপুরের ফ্লাইট ধরব।”
পরী, “এই দুমাসে তুমি আমার বাড়ি আসবে?”
romantic story
অভি, “কেন আসব না, নিশ্চয় আসবো।”
পরী, “বাসন্তি পুজোর পরে আমাকে নিতে তুমি আসবে?”
অভি, “সেটা ঠিক বলতে পারছি না পরী। আমার ফাইনাল পরীক্ষা মে মাসের শেষে। তোমার ছোটো মা আমাকে ছারবে কি না সন্দেহ আছে।”
পরী, “ছোটো মা কে আমার প্রনাম জানাবে ত?”
অভি, “সোনা মেয়ে, আমাদের যে দেখা হয়নি সেটা ভুলে যাচ্ছ কেন।”
পরী ওর গালে চিমটি কেটে বলে, “অঃ দেখ আমি ত এ সব গুলে খেয়েছিলাম। আমি ত ঘুরতে গেছি আমার বান্ধবীদের সাথে আর তুমি ত একা একা পাহাড়ে ঘুরে বেরাচ্ছ তাই না, দুষ্টু ছেলে?” তারপরে নাক কুঁচকে অভিকে খ্যাপানোর জন্য জিজ্ঞেস করে, “কি গো অভি, শীতের রাতে কাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছ তুমি?”
অভি ওর দিকে হেসে বলে, “তোমাকে একটা ভাল গল্প বানাতে হবে কল্যানির জন্য আর তোমার মায়ের আর ছোটো মা’র জন্য। সেটা ফেরার আগে ভেবে রেখ।”
পরী, “তাঁর জন্য ভাবতে হবে না। আমি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারি ওদের কে এমন গল্প বলব যে ওরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।”
অভি, “হ্যাঁ তোমার গল্পের কথা আর তোমার মাথার বুদ্ধি আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।”
পরী, “ওই দেখ তোমাকে ত আমি একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।”
অভি, “বাপরে আরও কিছু বলার বাকি আছে নাকি তোমার?” romantic story
নবীন ভোরের নবীন ঊষা এক নতুন পরী আর অভি কে সাদর আহ্বান জানায়। দু’জনের মনে আর কোন পরিতাপ নেই। পরীর মুখের মিষ্টি হাসি আর উচ্ছলতা অভিকে যেন নিয়ে যায় এক নতুন দিগন্তে। দুপুরের খাওয়া একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে নেয় ওরা, এবারে ফেরার পালা। সারাটা রাস্তা দু’জনে এদিক ওদিকের গল্প, ভ্রমণের গল্প করে কাটিয়ে দেয়। বল্বিন্দার ফেরার সময়ে সেই একই রাস্তা ধরে, ফাগু থেকে চায়েল হয়ে ছোটো রাস্তা।
পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “কালকে তোমার ফেরার ফ্লাইট কটায়?”
অভি, “আমি যদি আজ রাতে শুরু করি তাহলে কাল সকালের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব, দেখি যদি সকালের ফ্লাইটটা ধরতে পারি তাহলে দুপুরের মধ্যে বাড়ি না পেলে দুপুরের ফ্লাইট ধরব।”
পরী, “এই দুমাসে তুমি আমার বাড়ি আসবে?” romantic story
অভি, “কেন আসব না, নিশ্চয় আসবো।”
পরী, “বাসন্তি পুজোর পরে আমাকে নিতে তুমি আসবে?”
অভি, “সেটা ঠিক বলতে পারছি না পরী। আমার ফাইনাল পরীক্ষা মে মাসের শেষে। তোমার ছোটো মা আমাকে ছারবে কি না সন্দেহ আছে।”
পরী, “ছোটো মা কে আমার প্রনাম জানাবে ত?”
অভি, “সোনা মেয়ে, আমাদের যে দেখা হয়নি সেটা ভুলে যাচ্ছ কেন।” romantic story
নবীন ভোরের নবীন ঊষা এক নতুন পরী আর অভি কে সাদর আহ্বান জানায়। দু’জনের মনে আর কোন পরিতাপ নেই। পরীর মুখের মিষ্টি হাসি আর উচ্ছলতা অভিকে যেন নিয়ে যায় এক নতুন দিগন্তে। দুপুরের খাওয়া একটু তাড়াতাড়ি শেষ করে নেয় ওরা, এবারে ফেরার পালা। সারাটা রাস্তা দু’জনে এদিক ওদিকের গল্প, ভ্রমণের গল্প করে কাটিয়ে দেয়। বল্বিন্দার ফেরার সময়ে সেই একই রাস্তা ধরে, ফাগু থেকে চায়েল হয়ে ছোটো রাস্তা।
পরী ওকে জিজ্ঞেস করে, “কালকে তোমার ফেরার ফ্লাইট কটায়?”
অভি, “আমি যদি আজ রাতে শুরু করি তাহলে কাল সকালের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যাব, দেখি যদি সকালের ফ্লাইটটা ধরতে পারি তাহলে দুপুরের মধ্যে বাড়ি না পেলে দুপুরের ফ্লাইট ধরব।”
পরী, “এই দুমাসে তুমি আমার বাড়ি আসবে?” romantic story
অভি, “কেন আসব না, নিশ্চয় আসবো।”
পরী, “বাসন্তি পুজোর পরে আমাকে নিতে তুমি আসবে?”
অভি, “সেটা ঠিক বলতে পারছি না পরী। আমার ফাইনাল পরীক্ষা মে মাসের শেষে। তোমার ছোটো মা আমাকে ছারবে কি না সন্দেহ আছে।”
পরী, “ছোটো মা কে আমার প্রনাম জানাবে ত?”
অভি, “সোনা মেয়ে, আমাদের যে দেখা হয়নি সেটা ভুলে যাচ্ছ কেন।”
পরী ওর গালে চিমটি কেটে বলে, “অঃ দেখ আমি ত এ সব গুলে খেয়েছিলাম। আমি ত ঘুরতে গেছি আমার বান্ধবীদের সাথে আর তুমি ত একা একা পাহাড়ে ঘুরে বেরাচ্ছ তাই না, দুষ্টু ছেলে?” তারপরে নাক কুঁচকে অভিকে খ্যাপানোর জন্য জিজ্ঞেস করে, “কি গো অভি, শীতের রাতে কাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছ তুমি?”
অভি ওর দিকে হেসে বলে, “তোমাকে একটা ভাল গল্প বানাতে হবে কল্যানির জন্য আর তোমার মায়ের আর ছোটো মা’র জন্য। সেটা ফেরার আগে ভেবে রেখ।”
পরী, “তাঁর জন্য ভাবতে হবে না। আমি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারি ওদের কে এমন গল্প বলব যে ওরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।”
অভি, “হ্যাঁ তোমার গল্পের কথা আর তোমার মাথার বুদ্ধি আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।”
পরী, “ওই দেখ তোমাকে ত আমি একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।”
অভি, “বাপরে আরও কিছু বলার বাকি আছে নাকি তোমার?” romantic story
পরী, “না বাবা না, তুমি না সবসময়ে খালি খালি ওই সব কথাই ভাবো। তোমার মৃগাঙ্কের কথা মনে আছে, সুব্রতদার বন্ধু, এক সময়ে ও হাথ ধুয়ে আমার পেছনে পরে ছিল জানো।”
অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ জানি।”
পরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জানলে কি করে?”
অভি, “মনে আছে বউভাতের আগের দিন রাতে তোমার ছোটো মা আর বাকিদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ড লেগেছিল। সেদিন রাতে আমরা মদ খেয়েছিলাম আর মদের নেশায় মৃগাঙ্ক আমাদের ওর মনের কথা বলে ফেলেছিল।”
ওরা তাড়াতাড়ি ছ’টার মধ্যেই কাল্কা পৌঁছে যায়। কাল্কা পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। অভি বলবিন্দার কে দুরে গাড়ি রাখতে নির্দেশ দেয়, যাতে কারুর চোখে ওর গাড়ি না পরে। বলবিন্দার ওদের স্টেসানের সামনে নামিয়ে দিয়ে স্টেসান চত্তর থেকে বেশ কিছু দুরে গাড়ি দাঁড় করায়।
গাড়ি থেকে নেমে সব থেকে আগে অভি মাকে ফোন করে জানায় যে ও কাল্কা পৌঁছে গেছে, কাল সকালের মধ্যে ও দিল্লী পৌঁছতে পারলে সকালের ফ্লাইট ধরবে না হলে দুপুরের ফ্লাইট ধরে বাড়ি ফিরবে। তারপরে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফেরার পথে ওর সাথে আর দেখা হবে না কেননা অভি সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাবে।
পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে ওরা হাঁটতে শুরু করে স্টেসানের দিকে। সারাক্ষণ পরী অভির হাত নিজের হাতের মধ্যে করে রাখে, মনে হয় যেন ছারলেই যদি পালিয়ে যায় অভি। স্টেসানের গেটে এসে অভি পরীর ব্যাগ পরীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পরীর দু’চোখ ছলছল করে ওঠে। romantic story
অভি তর্জনী দিয়ে কপালে আলতো টোকা মেরে বলে, “বোকা মেয়ে কাঁদছ কেন। তাড়াতাড়ি ভেতরে যাও আর কল্যাণীদের সাথে দেখা করে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এস। আমি ওই চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষা করব।”
শেষ বারের মতন দু’জনের আঙ্গুল এঁকে অপরকে ছুঁল। পরীর যেন পা আর চলছে না, অভি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গেটের সামনে, যতক্ষণ না পরী ওই গেটের মধ্যে দিয়ে হারিয়ে গেল স্টেসানের ভিড়ে।
তিরিশ মিনিট যেন তিরিশটা বছর, অধির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে অভি, কখন ফিরে আসবে পরী। মনের মধ্যে এক অজানা আলোড়ন চলছে, ভেতরে কি হচ্ছে? কল্যানি ওকে কি জিজ্ঞেস করছে? পরী ওর বান্ধবীদের কে কি বলে বের হবে? আদৌ বের হতে পারবে কিনা? শেষ দেখা কি একবারের জন্য হবে না।
কিছুক্ষণ পরে অভি দেখতে পেল যে তিন জন মহিলা গেটের বাইরে হেঁটে আসছে, ভাল করে দেখে বুঝল যে ওর মধ্যে একজন পরী। অভির তৃষ্ণার্ত প্রানে যেন জল এল। আনমনে এদিক ওদিকে তাকাল পরী, একবার ওদের চারচোখ এক হল কিন্তু পরী ওর দিকে পাত্তা না দিয়ে আবার কল্যানির সাথে গল্প করতে শুরু করে দিল। ওই দেখে অভির বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেন দুমদুম করে বাজতে শুরু করে দিল। উৎকণ্ঠায় গলা শুকিয়ে এল অভির, কি হতে চলেছে এবারে? আদৌ পরী ওর সাথে দেখা করবে ত? romantic story
বেশ কিছু সময় আরও চলে গেল, অভি ওদের দিকে আর চোখে তাকিয়ে থাকে, পরী কি করছে। পরী আড় চোখে একবার অভির দিকে তাকাল, চাহনি যেন বলছে, “সোনা একটু অপেক্ষা করো।”
কল্যাণীদের সাথে গল্প করতে করতে পরী হটাত করে কল্যানিকে ওর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। ওরা সবাই অভির দিকে এগিয়ে এল। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে যেন ভুত দেখেছে। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে হাসি থামাতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসি টিকে প্রাণপণে বুকের ভেতরে চেপে দেয়। পরী ওর দিকে চোখ টিপে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে, “আরে অভিমন্যু যে, এখানে কি করে?”
কল্যানি আর রানী ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন ওরা কোনো ভুত দেখেছে। পরীর ঠোঁটে ওর পুর নাম শুনে দাতে দাঁত চেপে নিজের হাসিটিকে সংবরণ করে। অভিকে পরী যেমন শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই রকম উত্তর দিতে হবে না হলে রানী রাগ করবেন।
অভি উত্তর দেয়, “শুক্রবার চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ ছিল, সেটা সেরে দেখলাম যে হাতে বেশ সময় আছে তাই সিমলা ঘুরতে চলে এলাম। এই এখন দিল্লী ফিরব তা মাঝ পথে একটু বিশ্রাম নেবার জন্য এখানে চা খাওয়া।”
তারপরে পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শুচিস্মিতা, তুমি এখানে কি করে?”
পরী হাসি চেপে নেয়, মনে মনে বুঝতে পারে যে যেহেতু ও ওর পুরো নাম ধরে ডেকেছে তাই অভিও ওর পুরো নাম নিয়েছে। romantic story
পরী কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কল্যানি ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উত্তর দিল, “আমরা সিমলা কুল্লু মানালি ঘুরতে এসেছিলাম আমাদের বরের সাথে আর শুচিস্মিতা ও আমাদের সাথে এসেছিল। আজ রাতে ফিরে যাচ্ছি।”
পরী কল্যানির দিকে কৃতজ্ঞ নিয়ে তাকাল। ওখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক জন জানে যে কে কে মিথ্যে বলছে, তাও পরী আর অভি প্রাণপণে বুকের এক কোনে চেপে রাখে ফুটন্ত হাসি।
রানী অভি কে জিজ্ঞেস করল, “তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না?”
মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ।”
বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যায় অভির, রানী আর কল্যানী কি করে মাকে চেনে?
“তোমরা আমার মাকে চেন?”
কল্যানি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ চিনি। আমরা ত সেই ছোটো বেলা থেকে বন্ধু, আমি আর পরী একই স্কুলে পড়েছি যেখানে উলুপি ম্যাডাম পড়ান।”
পরী দেখল যে এবারে হয়ত ওরা অভিকে প্রশ্নের জালে জড়িয়ে ধরবে, ও কল্যাণী কে চুপ করতে বলে, “কি রে তুই, ওকে কি তোরা হিটলারের মতন প্রশ্ন জালে বিদ্ধ করবি নাকি?”
তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার হাতে কি একটু সময় আছে? তুমি কি আমাদের ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত থাকতে পারবে?”
রানী পরীকে বলে, “ও থাকতে যাবে কেন? ওর দেরি হয়ে যেতে পারে। আমাদের ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে সেই মাঝ রাত, ও কি করে অত সময় আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে? ওকে যেতে দে।” romantic story
পরী অল্প বিরক্তি হয়ে উঠল, অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে রানী কে বলে, “আমার ছোটো মা’র ছেলে, অনেকদিন পরে এই অচেনা জায়গায় দেখা হয়েছে। আমি যা বলব ও তাই করবে।”
রানী ওর কথা শুনে মৃদু রেগে গেল, “যা ভালো বুঝিস তাই কর, আমি ত শুধু ওর ভালোর জন্যে বলছিলাম। ওর যদি কোনও অসুবিধে না থাকে তাহলে আমার কি অসুবিধে হতে পারে?”
অভির বুঝতে দেরি হল না যে পরী রানীর কথায় আঘাত পেয়েছে, তাই কথা ঘুরিয়ে ওদের কে জিজ্ঞেস করল যে ওদের বরেরা কোথায় গেছে। কল্যাণী উত্তর দিল যে ওদের অয়েটিং রুমে ব্যাগ দেখার দায়িত্ব দিয়ে দু’জনে মিলে কোথাও আড্ডা মারতে বেড়িয়েছে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানিয়ে দিল যে, “আমাকে একা ফেলে যদি কোথাও যাও তাহলে দেখে নিও আমি কি করি।”
অভি ওর চোখের চাহনি দেখে ওর মনের ভাব বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় যে, “আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।”
কিছুক্ষণ পরে কোথা থেকে দিপঙ্কর আর রামানুজ উদয় হল। পরীকে দেখে দিপঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার, অর্জুন বাবুর সাথে হানিমুনে কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?”
দিপঙ্করের কোথা শুনে পরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। কল্যানির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী দিপঙ্করকে মৃদু ধাক্কা মেরে জানিয়ে দিল যে অভি ওখানে উপস্থিত। দিপঙ্কর অভিকে দেখে একটু অপ্রস্তুত বোধ করল। রামানুজ হাত বাড়িয়ে দিল অভির দিকে। romantic story
অভি ওদেরকে জিজ্ঞেস করল যে ওরা এই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না কোথাও গিয়ে বসতে চায়। সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল যে কোন রেস্টুরেনটে গিয়ে বসা যেতে পারে। সবাই রেস্তুরেন্টের দিকে হাঁটতে শুরু করে, পরী আর অভি বাকিদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। পরীর মুখ গম্ভির, বুকের কাছে হাত আড় করে নিজেকে সামলে নিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে অভির পাশাপাশি চুপ করে হাঁটতে থাকে।
পরীর মনের অবস্থা দেখে অভি একটু ঘাবড়ে যায় যে আবেগের বশে পরী কিছু না উলটোপালটা করে ফেলে। বুকটা টনটন করতে শুরু করে অভির, পরী এত কাছে থেকেও কত দুরে মনে হয়। সবার সম্মুখে ওকে জড়িয়ে সান্তনা দিতে পারছেনা অভি। বড় কষ্ট হয় পরীর ব্যাথিত চেহারা দেখে।
রেস্তুরেন্টে বসে সবাই গল্প করে কে কি রকম ভাবে ঘুরল। কিছু পরে অভি কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা যখন এত খোলা মেলা হয়ে গেছি ত একটা কোথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”
কল্যাণী ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”
পরীর দিকে চোরা চাহনি তে দেখে কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, “এই অর্জুন টি কে?”
ওর প্রশ্ন শুনে কল্যাণী আর রানী একটু থমকে গেল, পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে দু’জনে মনের মধ্যে চলতে থাকে যে সঠিক উত্তর দেবে কি দেবে না। পরী হালকা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ওরা অভিমন্যু কে অর্জুনের কোথা বলতে পারে।
কল্যাণী, “সত্যি বলতে শুচিস্মিতা আমাদের কে অর্জুনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু ত জানায় নি তবে ওর মুখ থেকে যা শুনেছি তাতে মনে হল ও তোমার ইন্দ্রানি মাসির দেওর, পরীর খুঁজে পাওয়া ভালবাসার মানুষ। আমি ত এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে আমরা এত ভাল বান্ধবী তাও কেন আমাদের কাছ থেকে অর্জুনের কথা ও চেপে গেল।”
রানী পরী কে জিজ্ঞেস করল, “পরী কেই অর্জুনের কথা জিজ্ঞেস করতে দোষ কি।”
পরী অস্বাভাবিক ভাবে চুপ, বুকের মধ্যে যেন ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথা ককিয়ে উঠছে বারে বারে। খুব ধির স্বরে উত্তর দিল, “আমরা দুজনে বেশ ভালো ঘুরেছি, ব্যাস এইটুকু এখন বলতে পারি। বাকি পরে শুনে নিস তোরা।”
গল্প করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। দিপঙ্কর ঘড়ি দেখে, “আরে দশটা বাজে যে।” romantic story
ওরা রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে স্টেসানের দিকে পা বাড়ায়। পরী ওদের বলে যে ও কিছুক্ষণ আরও অভির সাথে কাটাতে চায়। কল্যাণী ওকে বাঁধা দেয় না। বাকিরা স্টেসানে ঢুকে পরে, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে পরী আর অভি।
দুজনে চুপচাপ হাইওয়ের দিকে হাঁটতে থাকে। পরীর মুখের ওপরে ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথার ছবি। মাঝ রাস্তায় অভি ওকে দাঁড় করিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হল এত চুপ করে কেন আছো?”
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে বলে, “তুমি চলে যাও।”
অভি ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে বুকের কাছে টেনে আনে। অভির হাতের ছোঁয়া পেয়ে পরী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে পরী। অভি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু পরীর কান্না আর থামতে চায় না।
কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, “সোনা তুমি চলে যাও, প্লিস। এই ঠাণ্ডার রাতে আমার ট্রেন ছেড়ে দেবে আর তুমি একা একা স্টেসানে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই দৃশ্য আমার সহ্য হবে না, আমি ভেঙ্গে পড়ব অভি। আমাকে শান্ত করার জন্য আমার বান্ধবীরা আমার সাথে থাকবে কিন্তু তুমি? আমি চলে যাবার পরে তুমি কি করে থাকবে? আমি তোমার বুকের ওই ব্যাথা সহ্য করতে পারব না অভি, প্লিস তুমি এখুনি চলে যাও।”
অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “আমার জন্য চিন্তা কোরোনা, আমি ঠিক থাকব।” romantic story
পরী, “না তুমি চলে যাও। তুমি একা একা দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত নাড়াবে সেই দেখে আমি আরও ভেঙ্গে পড়ব অভি, প্লিস চলে যাও।”
অভি, “ঠিক আছে, দেখছি কি করা যায়।”
অভি ওর চোখের জল মুছে ওকে শান্ত হয়ে অনুরধ করে। তারপরে ওরা দু’জনে স্টেসানের দিকে হাটা দেয়। স্টেসানের বাইরে এসে দেখে যে কল্যাণী আর রানী ওদের পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরীর চোখের পাতা ভিজে দেখে কল্যাণী উৎসুক হয়ে অভির দিকে তাকায়। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না, কিছুক্ষণ মাথা চুলকে উত্তর দেয় যে পরী ওর ছোটো মার কথা মনে করে মন খারাপ হয়েছে তাই চোখে জল।
কল্যাণী ওর কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারল না। অভির দিকে একভাবে চেয়ে থাকে কল্যাণী। অভি বুক দুরদুর করে ওঠে, কল্যাণী কি কিছু বুঝতে পেরে গেছে? ওরা যা ভয় পাচ্ছিল সেটা ঘটে যায়। কল্যাণী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “মনে হচ্ছে কিছু অঙ্ক আমি মেলাতে পারছি না।”
অভির দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, “আজ বিকেলে তোমাকে এখানে দেখে ঠিক অঙ্ক মেলে নি আমার। তোমার চশমা, ঠিক এই চশমা ছিল অর্জুনের চোখে তাই না। খুলে যদি বলি তাহলে অর্জুন নামে কেউ নেই, তুমি ছিলে শুচিস্মিতার সাথে। কি আমি ঠিক বলছি কি না?”
ওই কথা শুনে অভির মনে হল যেন কেউ ওর মাথার ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেকোনো সময়ে ফেটে বেড়িয়ে আসবে এমন জোরে ধুকপুক করতে শুরু করে। পরী ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে, ওরা যে ধরা পরে গেছে। দু’চোখে বন্যা নামে, পরী ওর হাত শক্ত করে ধরে নেয়, কি হবে এবারে।
কল্যাণী পরীর মুখ দেখে সব বুঝতে পেরে যায়। পরীকে জিজ্ঞেস করে, “তোর সাথে অভিমন্যু ছিল তাই ত?”
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকায়। সারা চেহারায় ফুটে ওঠে কাতর আবেদন।
কল্যাণী ওর মুখ দেখে মৃদু হেসে বলে, “চিন্তা নেই তোর। একথা কেউ জানবে না, পরী।” romantic story
ওরা সবাই মিলে অয়েটিং রুমের দিকে হাতা দিল। কল্যাণীর কথা শুনে দু’জনের বুকের ওপরে এতক্ষণ যে পাথর চাপা ছিল সেটা সরে যায়। অয়েটিং রুমে বসা, দিপঙ্কর আর রামানুজ ওদের দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। রানী ওদের কে সব কথা বলে। কথা শুনে সবাই চুপ। অভির আর পরীর ধুকপুক করতে থাকে, কি হবে কি হবে।
রানী পরীর চিবুক আঙ্গুল দিয়ে নেড়ে হেসে বলে, “অরে মেয়ে চিন্তা করিস না। এই খবর আমাদের কাছে গোপনে থাকবে।”
সবাই মাথা নেড়ে সায় জানায় যে এই কথা ওরা কাউকে জানাবে না।
কল্যাণী পরীর পাশেই বসে ছিল, ওর জড়িয়ে ধরে বলল, “তুই এত চিন্তা করছিস কেন? ওকে ভালবাসিস বলে চিন্তা করছিস না তুই ওর চেয়ে বড় বলে চিন্তা করছিস। তুই সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়ে আর ও একটা বুদ্ধিমান ছেলে। তোরা একে অপরকে ভালবাসিস, এতে পাপ কোথায়? তুই ওর সম্পর্কের মাসি হস তাই ভয়? তোদের কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। ও তোর কে হয়? তোর মায়ের মামাত দিদির, সেজ মেয়ের ছেলে। তোদের সম্পর্ক অনেক অনেক দুরের, কেউ কাউকে চিন্তিস ও না।
ওটা হয়েছে কেননা উলুপি ম্যাডাম তোর বাড়ির কাছের স্কুলে পড়ান বলে তোদের পরিরবারে সাথে সম্পর্ক, তা না হলে তোরা কেউ কাউকে চিন্তস ও না।” romantic story
দিপঙ্কর অভির পিঠ চাপড়ে বলল, “ব্রাদার এত ভয় পাবার কি আছে? তুমি ত ভায়া আমার সব থেকে সুন্দরী শালি টাকে হাত করে নিলে আর তার সাথে একা একা কোন এক দুর্গম স্থানে ঘুরেও এলে। তোমার সাহসের বলিহারি।”
পরীর ওদের কে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাল, “তোদের কি করে যে ধন্যবাদ জানাব আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না রে।”
রানী ওদের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোরা দুটি শয়তান, সময় কেমন কাটালি?”
অভির দিকে চোখ মেরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আমার বান্ধবিকে বেশি ব্যাথা দাও নি ত?”
ওর কথা শুনে লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে গেল, অভির দিকে লাজুক মুখে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হেসে ফেলল পরী। পরীর পুনরায় হসি মুখ দেখে অভির মন থেকে চিন্তার পাথর সরে যায়।
কল্যাণী পরীর গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, “তোরা তাহলে বেড়াতে গিয়ে অনেক মজা করেছিস তাই না? আমি তোর চোখের হাসি দেখে বুঝতে পেরে গেছি সুতরাং আমার কাছে লুকিয়ে বিশেষ লাভ হবে না, পরী।”
চিন্তার মেঘ কেটে গেছ, ওরা সবাই আবার ঘোরার গল্পে মেতে উঠল, কে কি রকম কোথায় কোথায় ঘুরেছে তাঁর বর্ণনা করতে শুরু করে দিল। পরীর মুখে চিতকুলের বর্ণনা শুনে ওরা চারজনে অভিভুত। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকে ওর হাত। সময় খুব দ্রুত বয়ে চলে। স্টেসানের লাউডস্পিকারে ট্রেনের আগমনের ঘোষণা শুনে ওদের সময়ের কথা মনে পরে যায়। romantic story
দিপঙ্কর আর রামানুজ ট্রেনে উঠে ওদের সিটে নিজেদের ব্যাগ পত্র রাখে। পরী অভির হাত শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে প্লাটফরমের ওপরে, ওকে ছাড়তে একদম মন চাইছে না। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কবে আবার দেখা হবে পরীর সাথে, কি করে ছেড়ে যাবে পরীকে। বুকের ভেতর টনটন করে ওঠে আসন্ন বিরহ বেদনায়। কল্যাণী পরীর কাঁধে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে ট্রেনে উঠতে। পরী অভির হাত ছাড়তে চায় না।
কান্না ভেজা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি চলে যাও, তুমি আমার কথা শুনলে না। আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমি তোমাকে একা ফেলে কি করে যাব অভি। আমি তোমাকে বার বার বলেছিলাম চলে যেতে, অভি।”
কল্যাণী পরীকে জড়িয়ে ধরে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। অভি ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গালের অপরের জলের দাগ মুছিয়ে দেয়। গালে অভির হাতের পরশ পেয়ে আরও যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে পরী।
অভি, “প্লিস ছোটো বাচ্চার মতন কাঁদে না সোনা, আমি ঠিক আছি সোনা।”
কল্যাণী অভিকে জানায় যে ও পরীকে সামলে নেবে। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে, বুকের ভেতরে বিরহের সুর বেজে ওঠে। ওর ভয় করে আবার যেন পরী অজ্ঞান না হয়ে যায়।
অভি, “আমি কথা দিচ্ছি যে এই দু’মাসে তোমার সাথে কিছু করে হক আমি দেখা করব।”
কল্যাণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “দু’মাস অনেক লম্বা সময়।” মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ কিন্তু কি করা যাবে।” romantic story
কল্যাণী পরীকে নিয়ে ট্রেনের দিকে হাটা লাগায়। কল্যাণী ট্রেনে উঠে পরে। অভি একমনে দেখতে থাকে পরীকে। এমন সময় কল্যাণীর হাত ছাড়িয়ে পরী ঘুরে দাঁড়ায়, আর দৌড়ে এসে অভির বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। অভি দুহাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পরীকে, যেন পৃথিবীর কোন শক্তি ওদের কে বিচ্ছিন্ন করেত না পারে। পরীর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। অভির বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে পরী।
ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে। পরীকে কোন মতে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে। পরী দৌড়ে ওর বান্ধবীদের কাছে চলে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেয়, পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে। পরী ওর ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, তাঁর ডগায় একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে অভির দিকে ছুঁড়ে দেয়। অভি পরীর ছোড়া সেই চুমু টা লুফে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।
অভি ডান হাতের তর্জনী উঠায় ইশারা করে “আই” তারপরে বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী মেলে ধরে, ইশারা করে “এল” শেষে মধ্যমা আর অনামিকা ফাঁক করে ইশারা করে “ইউ”।
ট্রেন ঘন কালো অন্ধকারে মিলিয়ে যায় কিছুক্ষণে মধ্যেই। অভি একা দাঁড়িয়ে থাকে খালি প্লাটফরমের ওপরে, বুক টা হুহু করে ওঠে। বাকি রাস্তা ওকে একা একা ফিরতে হবে, সাথে থাকবে না পরী। পকেট থেকে রুমাল টি বের করে একবার পরীর গায়ের গন্ধ মুখে মেখে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। romantic story
তৃতীয় অধ্যায়ঃ গঙ্গাবক্ষে জোয়ার ভাঁটা
জলপরীর স্বপ্ন
অভিমন্যু তালুকদারের পরিবার বেশ সচ্ছল। দমদমে ওদের বিশাল দু’তলা বাড়ি। একতলায় একটা মারয়ারি পরিবার ভাড়া থাকে। দু’তলায় তিনটে শোবার ঘর, একটি খাবার ঘর আর একটি বশার ঘর। তিন’তলায় একটি শোবার ঘর আছে। মায়ের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, পরীর জন্য, অভিকে ওর দুতলার ঘর ছেড়ে দিতে হয়। মায়ের মেয়ের চেয়ে ভাবি বউমা বলা ভাল, যদিও অভির মনে সংশয়ের দানা বাঁধা যে মা বাবা র সম্মতি পাওয়া অনেক অনেক কষ্টকর হবে। বাবার আদেশ অমান্য করা যায় না, দু’তলায় ঘর খালি থাকলেও অভিকে তিন তলার ঘর বরাদ্দ করা হয়।
কলেজের পরীক্ষা সামনে, পরাশুনায় ডুবে যায় অভিমন্যু। রোজ রাতের বেলা পরীর কাজল কালো চোখ ওর খোলা বইয়ের পাতায় ফুটে ওঠে। গালে পরীর ঠোঁটের পরশ অনুভব করে তখন। মন যেন কেমন করে ওঠে অভির। কাল্কা তে পরী যে চুমু ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁর কথা অভির বারে বারে মনে পরে যায়, সেই চুমু টাকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে অভি। পড়তে বসে পড়ার দিকে মন থাকে না।
রুমাল বের করে মাঝে মাঝে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে পরীর স্পর্শ নিতে চেষ্টা করে, মুখের ওপরে মেলে ধরে রুমাল, অনুভব করতে চেষ্টা করে পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া। গ্রামের মেয়ে লাজুক পরী, মিলনের সময়েও একবারের জন্য নিজেকে অভির চোখের সামনে উন্মুক্ত করতে পারেনি। romantic story
দিনটা ছিল বৃহস্পতি বার, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ কমে এসেছে। আকাশে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাওয়ায় যেন ভালবাসা ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলে যাবার আগে মা অভিকে জানাল যে বিয়ের পরে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো হয়নি তাই আজ মা ওদের কে বাড়িতে ডেকেছে। অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, একবারের জন্য জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে পরী সাথে আসবে কিনা। কিন্তু কিন্তু করেও শেষ পর্যন্ত মাকে জিজ্ঞেস করে যে পরী সাথে আসছে কি না।
মা জানালেন আসতেও পারে নাও আসতে পারে পরী। পরীর আসার ঠিক নেই শুনে অভির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কলেজে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে অভির। বারেবারে পরীর চোখ বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে ওঠে।
রাতে ফিসিক্স পেপারের কোচিং ক্লাস ছিল তাই অভির বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজায় অভি। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা বারন্দা থেকে দেখলেন যে কে এসেছে।
দরজা খুলল কেউ, সামনে পরীকে দেখে হাঁ হয়ে গেল অভি। বাঁ পা চউকাঠের ভেতরে কিন্তু তারপরে আর পা ওঠে না অভির।
অভির বিস্ময়ান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে পরী। চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে ওর খোলা মুখ বন্ধ করে দিল, হেসে বলল, “মাছি ঢুকে যাবে যে!”
অভি হাঁ করে তাকিয়ে পরীর রুপ দেখে। অনেক দিন পরে পরীকে যে নতুন করে দেখছে অভি। ফর্সা কপালে, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে নীল রঙের টিপ। লম্বা ঘন কালো চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপরে থেকে সামনের দিকে নেমে এসেছে। চুলের কিছু অংশ মুখখানি কিছুটা ঢেকে রেখেছে যেন চাঁদ লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। পরনে আঁটো গাড় নীল রঙের কামিজ, বুকের নিচ থেকে ফুলে উঠে একদম হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে ঘাগরার মতন। হাসিতে গালে টোল পড়েছে আর অভির ওই হাসি দেখে মনে হল যেন এখুনি পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর লাল লাল গালে চুমু খায়। romantic story
পরী ওর মুখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপরে আঙ্গুল রেখে বলে, “আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার ভেতর টা কেমন করে উঠছে, অভি।”
অভি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরী ওকে আলতো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, “কি করছ? বাড়িতে সবাই আছে যে। দেরি দেখলে এখুনি ছোটো মা ডাক দেবে।”
চালে মত্ত ছন্দ এনে অভির কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় পরী। অভি কিছুক্ষণ ওকে পেছন থেকে দেখে, তারপরে আবার হাত বাড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। পরী দৌড়ে ওর হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বার বার পেছনে তাকিয়ে হাসে আর দুচোখ যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে, “ধরতে পারলে আমি তোমার।”
বসার ঘরে ঢুকে অভি দেখল যে বাবা মা সুব্রত মৈথিলী বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
সুব্রত ওকে দেখে বলে উঠল, “কি মামা কেমন আছো?”
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় অভি। মৈথিলীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “মামা আমি ভাল, তোমার খবর বল?”
নতুন বউ মৈথিলী কে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে, পরনে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। এই বার বেশ কাছ থেকে দেখছে মৈথিলীকে, বিয়ের সময়ে তো ঠিক করে দেখে ওঠা হয়নি নতুন বউকে। গায়ের রঙ পরীর মতন অত ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে মৈথিলীকে। বেশ খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অভি। সুব্রত ওর কাঁধ চাপড়ে ওর কলেজের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। অভি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় যে সব ঠিক চলছে। romantic story
মা জানালেন যে ওদের আনতে গিয়ে পরী ও বায়না ধরে যে আসবে তাই মা ওকেও সাথে নিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে পরী চোরা চাহনিতে অভির দিকে তাকায়, “দেখলে ত আমার বুদ্ধি।”
সামনে পরী মায়ের সাথে বসে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর খাচ্ছে। পরীর মুখে অনাবিল আনন্দ, যেন অনেক দিন পরে ও হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজে পেয়েছে।
মা ওদেরকে শোনাতে লাগ্লেন যে পরীর ঘর টাকে মা কি রকম করে সাজিয়েছেন। সব ঘরের জন্য নতুন পর্দা কেনা হয়েছে, পরীর যে রঙ ভালো লাগে সেই রঙের বিছানার চাদর কেনা হয়েছে। এমনকি ঘরের দেয়ালের রঙ পর্যন্ত পরীর পছন্দের রঙ্গে রঙ করেছে মা। অভির সেই কথা ঠিক সহ্য হল না, মায়ের যেন সব কিছু বাড়িয়ে বলার স্বভাব। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, ধিরে ধিরে পরী জানতে পারবে ওর ছোটো মা কি রকম মানুষ। অভি মাথা ব্যাথার ছল করে অখান থেকে উঠে, তিন তলায় নিজের ঘরে চলে এল।
মায়ের সবকিছু যেন বারাবারি করে বলার স্বভাব। নিজে কি করেছে না করেছে যেন সবাইকে ঢাক পিটিয়ে না বললে শান্তি হয় না মায়ের। অভির প্রতি ভালবাসা বাঁ স্নেহ যেন মা সবসময়ে পয়সা দিয়ে মাপে। মাঝে মাঝেই শোনাতে ছারে না যে যেহেতু বাবা মা ওর পড়াশুনার জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে সুতরাং ওকে ভাল রেসাল্ট করতেই হবে। জয়েন্ট পায়নি বলে ওর মুন্ডুপাত করতে ছারেনি মা। এই সব ভাবতে ভাবতে চুপ করে টেবিলের পাশে বসে থাকে অভি। এমন সময়ে দরজায় কেউ টোকা মারে।
অভি ভাবে পরী হয়ত দেখা করতে এসেছে, কিন্তু ঘুরে দেখে যে দরজায় সুব্রত দাঁড়িয়ে। সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি মামা কি ব্যাপার? সব কিছু ঠিক ত।”
অভি ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, “মামা সব ঠিক।”
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, “আজ রাতে পারটি করা যাবে কি?”
অভি উত্তর দিল, “হ্যাঁ মামা, করা যাবে। কিন্তু তুমি কি এনেছ না আমাকে নিয়ে আসতে হবে?” romantic story
সুব্রত, “না মামা আমি আনিনি, তোমাকে যোগাড় করতে হবে।”
অভি, “ঠিক আছে যোগাড় হয়ে যাবে চিন্তা কোর না।”
সুব্রত, “উলুপিদি জানতে পারবে না ত? জানতে পারলে…”
অভি ওকে আসস্থ করে, “না মামা জানতে পারবে না। রাতের বেলা কেউ উপরে আসে না। আমরা চাইলে সারা রাত ধরে গল্প করতে পারি। এই টুকু স্বাধীনতা মা আমাকে দিয়েছে যে আমার ঘরে কন বন্ধু এলে মা আমার ঘরে আসেন না। আর যাই হক, সকালে কলেজে যাবার সময়ে আমি সব বোতল নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।”
অভি মাকে বলল যে ও আর সুব্রত একটু বাইরে যাচ্ছে। মৈথিলী আর পরী ওদের দু’জনার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল।
মৈথিলী সুব্রতর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাওয়া হচ্ছে? যেখানেই যাচ্ছ বেশি দেরি করবে না, খাওয়ার আগেই চলে আসবে।”
সুব্রতর হয়ে অভি উত্তর দিল, “চিন্তা করও না আমি তোমার বর কে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমরা খাওয়ার আগেই ফিরে আসব।”
পরী মৈথিলী কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি জানি তোমরা কোথায় যাচ্ছ।”
অভি বুঝতে পারল যে পরী বুঝে গেছে তাই চুপ করার জন্য ওকে ধমকের সুরে বলল, “ঠিক আছে হয়েছে, এবারে ভেতরে যাও তুমি।”
অ্যালকোহল কিনতে বেড়িয়ে গেল ওরা। বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকানে পেয়ে যেতে পারে না পেলে খান্না না হয় দমদম স্টেসানের কাছে যেতে হবে।
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা মামা তুমি অরুনিমার ওপরে কি জাদু করেছ? বারবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।” romantic story
অভি মাথা চুলকায়, অরুনিমা কে অরুনিমা? তারপরে মনে পরে, হ্যাঁ সুব্রতর শ্যালিকা অরুনিমা, দক্ষিণ কোলকাতায় থাকে, বউভাতের দিন দেখা হয়েছিল।
সুব্রত ওর মুখ দেখে বলে, “কি মামা, অরুনিমাকে ভুলে গেলে? আমার সেই সুন্দরী শ্যালিকা, বউভাতের দিনে দেখা হয়েছিল তোমার সাথে।”
অভি, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, অরুনিমার কথা।”
সুব্রত, “কি মামা, তুমি আমার অমন সাধের শালিকাকে ভুলে গেলে। ও তোমার কথা কত জিজ্ঞেস করেছিল।”
অভির অসব কথা ঠিক পছন্দ হয় না, তাই কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মামা তুমি বল তোমার হানিমুন কেমন গেল। হানিমুনে গিয়ে চুরনির সাথে কি কি খেলা করলে।”
সুব্রত, “মামা গোয়া দারুন জায়গা। শীতকালে ত আরও সুন্দর মামা। অইসব রোদে ঢাকা বিচ আর তাঁর ওপরে বিকিনি পরা মেয়েছেলেরা। মামা কি যে বলব, চোখের যে কি সুখ, বলে বুঝাতে পারব না।”
অভি, “ত তুমি বউকে ছেড়ে ওই বিকিনি পরা মেয়েদের দেখছিলে?”
সুব্রত, “মামা, বিউটি দেখা ভাল, টাচ না করলেই হল।”
অভি, “তাঁর মানে কি চুরনি সুন্দরী নয়?”
সুব্রত, “না না না আমার মানে সেটা নয়…” romantic story
সুব্রত শুরু করল ওদের হানিমুনের গল্প। দমদম থেকে ওরা অ্যালকোহল কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফেরা শুরু করল। ফেরার পথে আবার সুব্রতর মুখে অরুনিমার কথা।
সুব্রত, “অরুনিমা আমাকে বলেছিল যে ও নাকি তোমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়েছে আর তুমি নাকি এক বারও ফোন করনি?”
অভি, “মামা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওর কথা ত আমি কি করে ওকে ফোন করব। যাই হক ও অত বার করে আমার কথা কেন জিজ্ঞেস করছিল?”
সুব্রত, “আরে মামা, না জানার ভান কোরনা একদম। তুমি ওকে কি জল খাইয়েছ সেটা তুমি জানো।”
অভি ওকে মজা করে বলল, “মামা আর একবার অরুনিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও তারপরে দ্যাখ তোমার শালির অবস্থা কি করি।”
সুব্রত জোরে হেসে ফেলল, “মামা অরুনিমা তোমার সাথে দেখা করার জন্য পাগল। আমি তোমার ফোন নাম্বার ওকে দেইনি এই ভেবে যে তুমি কি ভাববে তাই। যাই হক আমি তোমার কথা অরুনিমার কাছে পৌঁছে দেব।”
বাড়ি ফিরে দেখল, যে খাবার তৈরি। মা জানালেন যে পরী মায়ের সাথে শোবে। পরীর ঘরে সুব্রত আর মৈথিলী বাবার জায়গা গেস্ট রুমে। খাবার পরে সুব্রত আর অভি তিন তলায় অভির ঘরে চলে যায়, ড্রিঙ্ক পার্টি শুরু করার জন্য।
অভি আর সুব্রত মুখমুখি বিছানার ওপরে বসে। অভি বিছানার ওপরে খবরের কাগজ পেতে দেয় তার ওপরে বোতল আর গ্লাস রাখে। সুব্রত প্রথম পানের গ্লাস তৈরি করে অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।
অভি, “চিয়ারস ফর হানিমুন মামা।”
সুব্রতর কিছুক্ষণ পরেই নেশা চরে যায়, “কি জায়গা মামা, কি যে বলব।” romantic story
অভি, “তুমি মামা শুধু বিচ আর বিউটি দেখেছ? তোমার চুরনির বিউটি দেখনি?”
সুব্রত, “চুরনি চুরনি চুরনি… আমার স্বপ্নের সেক্সি বউ।”
অভি, “আমি জানি তোমার সেক্সি বউ, তারপর কি হল?”
সুব্রত, “মামা হানিমুনে তুমিও গোয়া যেও।”
অভি মনে মনে বলে, “আমার সমুদ্র সৈকত পছন্দ করে না, পাহাড় পছন্দ করে। হানিমুন ত আমরা পাহারে কাটিয়ে এসেছি।” অভি ওকে বলে, “না মামা, আমার পাহাড় পছন্দ, আমি আমার বউকে নিয়ে হানিমুনে পাহাড়েই যাবো।”
গল্প চলতে থাকে, রাত এগারটা বেজে যায় গল্প করতে করতে। কলকাতার ফেব্রুয়ারি মাসের শীত বড় মিষ্টি। কিন্তু আজ মদের নেশায় আর মৈথিলীর রুপ যেন ওর শরীর গরম করে দিয়েছে। গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে দেয় অভি। চোখের সামনে এক কমনীয় নারী মূর্তি ভেসে ওঠে, কে ও পরী না মৈথিলী?
সুব্রত আর অভি দুজনের নেশা আজ ঠিক ঠাক, নিজেদের আয়ত্তে আছে এখন, বউভাতের আগের দিনের রাতের মতন চুরান্ত অবস্থায় এখন পৌঁছায়নি ওরা। কিছুক্ষণ পরে দুজনেই চুপ, যেন আর কিছু বলার নেই। এক এক চুমুক গ্লাসে দিতে দিতে এঁকে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে লাল লাল চোখে।
ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। মৈথিলী দরজার পাল্লা ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে, পেছন পেছন পরী।
মৈথিলী বোতল আর গ্লাস দেখে আঁতকে ওঠে, “কি হচ্ছে এ সব। আমি ত ভাবছিলাম যে তোমারা এমনি গল্প গুজব করছ, ঘুণাক্ষরে ও ভাবতে পারিনি যে তোমরা দারুর বোতল নিয়ে বসবে, সেই রাতের কথা মনে নেই তোমাদের?” romantic story
নেশায় ঢুলু ঢুলু অভির চোখের সামনে দুই সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে। মৈথিলীর পরনে একটা হালকা বেগুনি রঙের টু’পিস নাইটড্রেস। কোমরের কাছে বেল্ট দিয়ে বাঁধা থাকার দরুন উন্নত বুখ দুটি যেন ফুলে উঠেছে। ভেতরের নাইটড্রেস টা মনে হয় হাতকাটা এবং ছোটো। মাঝে মাঝে অপরের অংশের ফ্লাপ খুলে যাওয়ার দরুন মসৃণ পা বেড়িয়ে পড়ছে। মাথার চুল খোলা, চোখে যেন আগুন। কটমট করে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে আছে। পরী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে পরনে সাদা রঙের পাতলা একটা নাইট ড্রেস।
পরীর পেলব শরীরের সাথে লেপটে রয়েছে গায়ের কাপড়। পরী পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে মৈথিলীর কোমর আর ওর কাঁধের ওপরে থুতনি রেখে মিটিমিটি করে অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
অভির নেশার চোখে ঠাহর করতে পারছে না যে এই রাতে কাকে বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে, পরী না মৈথিলী। পরী মত্ত চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দেয় আর জিব দিয়ে অপরের ঠোঁট চেটে নেয়। অভির হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে পরীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। সুব্রত মৈথিলীর দিকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সুযোগ পেলে যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে মৈথিলীর ওপরে আর কুটিকুটি করে ছিঁড়ে খাবে ওর কমনীয়তা। পরী যেহেতু মৈথিলীর বুকের নিচে হাত দিয়ে থাকে তাই মৈথিলীর বুক দুটি অস্বাভাবিক রুপে সামনের দিকে ঠেলে ওঠে। সুব্রত আর অভির দু’জনের সেই উন্নত বক্ষ দেখে শিরায় শিরায় উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পরে।
অভি ওদের রুপ লাবন্য দেখে আর থাকতে পারে না। পরীর হাসি যেন ওর বুকের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা অভি, ওর ওই লাল লাল গালে চুমু খেতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাত মৈথিলীর দিকে ছড়িয়ে দিয়ে, দু’চোখ পরীর চোখের ওপরে নিবদ্ধ করে গান গেয়ে ওঠে, romantic story
“এয়সে না মুঝে তুম দেখো…সিনে সে লগা লুঙ্গা…তুমকো মেয় চুরা লুঙ্গা তুমসে…দিল মে ছুপা লুঙ্গা…”
ওর গান শুনে মৈথিলী একটু থমকে যায়। দুজনেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। পরী বুঝতে পারে যে গান টা অভি ওর জন্য গেয়েছে, কিন্তু লজ্জায় মৈথিলী নিজের মুখ দুহাতে ঢেকে নেয়। সুব্রত লাফিয়ে নেমে পরে বিছানা থেকে আর অভির কান ধরে উঠিয়ে দেয়।
সুব্রত, “আবে কুত্তা, আমার বউকে লাইন মারা হচ্ছে?”
অভি মনে মনে বলে, “মামা আমি তোমার বউকে কেন লাইন মারতে যাব। আমার বউ যে তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে, আমি গান ত আমার বউয়ের জন্য গেয়েছি।”
কিন্তু সুব্রতর সাথে মজা করার জন্য বলে, “মামা চুরনি কে দেখে আর থাকতে পারলাম না মামা, আচমকা গান টা বুক থেকে বেড়িয়ে গেল।”
সবাই হেসে ওঠে ওর কথায়। তারপরে সবাই বসে পরে বিছানার ওপরে। মৈথিলী সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে আর সুব্রত মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে থাকে। জড়াজড়ি করার ফলে মৈথিলীর পরনের কাপড় হাটুর ওপরে উঠে আসে আর মসৃণ বাঁকা পায়ের গুচ্ছ নেশাগ্রস্ত অভির চোখের বেড়িয়ে পরে। সেই দৃশ্য দেখে অভির গালার কাছে উত্তেজনা দলা পাকিয়ে যায়। সুব্রতর আদরের চটে মৈথিলীর চোখ কিঞ্চিত বন্ধ হয়ে আসে। পরী আর অভি জানে যে ওদের সামনে ওরা প্রেমিক প্রেমিকা নয় তাই ওরা দুজনে একটু দুরে দুরে বসে।
পরীর মনে অভির মুখ দেখে বড় কষ্ট হয়, এত কাছে থাকা সত্তেও ও ওর কোলে মাথা রেখে শুতে পারছে না। হৃদয়ের ভেতর টা যেন কেঁদে ওঠে পরীর। শুধু দুজন দুজনার দিকে চোরা চাহনিতে প্রেম নিবেদন ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।
মৈথিলী অভিকে বলে, “অভিমন্যু তুমি আমার বরকে মাতাল বানিয়ে ছাড়লে।”
অভি, “আরে চুরনি, আমার সাথে দেখা হওয়ার আগে থেকে তোমার বর ড্রিঙ্ক করে।” romantic story
মৈথিলী ওর কথা শুনে সুব্রতর দিকে কটমট করে তাকায়, এই যেন খেয়ে ফেলবে। সুব্রত বিব্রত বোধ করে, মৈথিলীকে শান্ত করার জন্য বলে, “না গো, আমি একদম ড্রিঙ্ক করি না, এই শুধু বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান হলে করে ফেলি।”
মৈথিলী, “আজ বিশেষ কোন অনুষ্ঠান আছে শুনি?”
সুব্রত, “বাঃ রে, আজকে ত বেশ বড় দিন। উলুপিদি আমাদের নেমন্তন্ন করেছে, অভিমন্যুর সাথে দেখা হল, আমাদের হানিমুন ভাল কেটেছে… আরও কত কিছু আছে বেবি।”
অভি, “পিনেঅয়ালে কো পিনে কা বাহানা চাহিয়ে, মাতালের শুধু মাত্র একটা ফাঁক দরকার, চুরনি।”
পরী আর মৈথিলী দুজনেই অভির কথা শুনে হেসে ফেলল। মৈথিলী সুব্রতকে বলল, “আর গলায় না ঢেলে আমার সাথে শুতে এসো তাড়াতাড়ি।”
মৈথিলীর দিকে দেখল অভি, মৈথিলী একটু বিরক্তি ভরা চোখে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে।
অভি ওকে খ্যাপানর জন্য বলল, “রাতের জন্য তর সইছেনা চুরনি? রাতে শোবে না জেগে কাটাবে?”
ওর কথা শুনে মৈথিলীর মুখ আবার লজ্জায় লালা হয়ে ওঠে। পরী বিরক্ত হয়ে অভিকে বকে, “তুমি চুপ করবে না হলে আমি কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলব।”
অভি পরীর দিকে ফিরে মাথা নুইয়ে ইশারায় জানায়, “তোমার হাতে মরার জন্য আমি কবে থেকে তৈরি।”
সুব্রত মৈথিলীকে অনুনয় করে, “প্লিস প্লিস প্লিস, আর একটা গ্লাস, ব্যাস তারপরে আমি তোমার বাহুতে।” romantic story
পরী অভিমান করে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা গিলবে ওই সব আর আমরা কি আঙ্গুল চুষব?”
সুব্রত, “আরে না না, তোরা কোক খেতে পারিস।”
কোকের বতলের দিকে তাকিয়ে দেখল যে বোতল খালি। পরী খালি বোতল টা ওদের নাকের সামনে নাড়িয়ে বলল, “আমরা কি খালি জল খাব? তা হবে না।”
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, “মামা কি করা যায়, এই রাতে এদের জন্য কিছু যোগাড় করতে হবে যে না হলে আমি ত রাতে শুতে পারব না মামা।”
অভি আবার গেয়ে উঠল,
“কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা…কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা…এক দো চার নেহি সারা শহর হ্যায় পিনে ওয়ালা…”
কবিতা শুনে সুব্রত বলে উঠল, “অয়াহ অয়াহ… কেয়া বাত হ্যায়, তাহলে যাও মামা এক লিটার কোক নিয়ে এস।”
রাত সাড়ে বারটা বাজে, অভি একবার ঘড়ি দেখল একবার পরী কে দেখল। তারপরে দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়ে বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকান থেকে এক বোতল কোক কিনে আনল।
হাপাতে হাপাতে সিঁড়ি চরে ছাদে উঠে লক্ষ্য করে যে পরী খালি ছাদের দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে একমনে তারা দেখছে। আকাশে বাঁকা চাঁদ, মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে লুকোচুরি খেলছে। romantic story
পরীর হাত বুকের কাছে ভাঁজ করা। সেই অন্ধকার রাতের মৃদু আলোতে পরীকে যেন স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে। পরনের পাতলা কাপড় ওর ত্বকের সাথে লেপ্টে রয়েছে, কাঁধ অনাবৃত। হাত আর কাঁধের মসৃণ ত্বকের ওপরে রাতের মৃদু আলো পিছলে যাচ্ছে যেন। চওরা পিঠের পরে পরীর পাতলা কোমরের দিকে অভির ক্ষুধার্ত চোখ গেল। ঠিক পাতলা কোমরের নিচে ফুলে উঠেছে কোমল নিতম্ব। পরনের কাপড় এত পাতলা যে পরীর শরীরের প্রতিটি বাঁক ফুটে উঠে ওর ক্ষুধার্ত চোখের সামনে উন্মুক্ত।
মাথার চুল খোলা, হাওয়ায় উড়ে মাঝে মাঝে ওর সুন্দর মুখের ওপরে চলে আসছে। পরীর কোমল শরীর দেখে অভির মাথার মধ্যে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। বুকের মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগে যে এখুনি ওকে বাহুপাসে নিয়ে মত্ত খেলায় রত হয় অভি।
পা টিপে টিপে পরীর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় অভি। হৃদয় ওকে সাবধান করে, “কি করতে চলেছ অভি, সময় ঠিক নয়।”
পরী রাতের আকাশ দেখতে এত বিভোর ছিল যে টের পায় না যে অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। অভির মাথা ওকে থামতে বারন করে, বলে, “কি বোকা তুমি। তোমার প্রেমিকা একা একা দাঁড়িয়ে তোমার সামনে আর তুমি বোকার মতন চেয়ে দেখছ? যাও জড়িয়ে ধর।” romantic story
অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ নামিয়ে গোল কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। আচমকা কারুর ঠোঁটের পরসে পরী চমকে ওঠে, তারপরে পেছনে মাথা হেলিয়ে অভি কে জিজ্ঞেস করে, “কখন এলে?”
অভি ওর পেটের ওপরে হাত রাখে, আর আলতো করে পেটের নরম মাংসে চাপ দেয়। ধিরে ধিরে অভির হাত পেটের নিচে নামতে শুরু করে। তলপেটের ঠিক নিচে আর জানুসন্ধির ঠিক ওপরে বাঁ হাত রাখে অভি। ডান হাত পরীর বুকের মাঝখান থেকে নিয়ে গলা ধরে পেছন দিকে চেপে নেয় যাতে ওর গাল অভির গালে লাগে। পরী ওর উত্তপ্ত বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে প্রেমের আবেগে কেঁপে ওঠে।
অভি মৃদুকনে ওর কানে কানে বলে, “অনেকক্ষণ আগে সোনা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে সাম্লাতে পারলাম না, সোনা।”
পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে, “ম্মম্মম্মম… কি করছ কি? সুব্রতদা আর মৈথিলী তোমার রুমে আছে।”
ধরা পরে যেতে পারে এই ভয়টা যেন অভিকে আরও পাগল করে তোলে। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে আর কানের লতিতে চুমু খেতে শুরু করে। ধিরে ধিরে ওর নরম গালে গাল ঘষতে থাকে অভি, ত্বকের ঘর্ষণের ফলে দু’জনের শরীর থেকে আগুনের ফুল্কি বের হয়ে শুরু করে দেয়। অভির শয়তান হাত পরীর পুরুষ্টু নিতম্বের ওপরে খেলা করতে শুরু করে। কাপড়ের ওপর থেকে ছুঁয়ে বুঝতে পারে যে পরীর নাইটড্রেসের নিচে কিছুই পরেনি। সেটা ভেবেই অভির মাথার মধ্যে বাসনার রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠে।
হাতের মধ্যে পিষে ফেলে একটা নিতম্ব বলয়। পরী থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়, হাত পেছনে নিয়ে অভির চুলে মুঠি করে ধরে। অভি ওর নিতম্বের খাজের মধ্যে নিজের কঠিন সিংহ টিকে চেপে ধরে। পরী উত্তপ্ত সিংহের স্পর্শে কেঁপে ওঠে বারংবার।
অভি পরীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলত, তুমি আমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে, তাই না?”
পরী প্রেমঘন মৃদুকনে উত্তর দেয়, “অভি আমার সারা শরীর কিছু হচ্ছে, অভি আমাকে ছেড়ে দাও প্লিস। ওরা যদি বেড়িয়ে আসে তাহলে আমরা খুব বিপদে পরে যাব।”
অভি, “তাহলে একা একা এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?”
পরী, “তুমি চলে গেলে, আমার খুব একা লাগছিল। ওরা দুজনে প্রেম শুরু করে দিল তাই ওদের ছেড়ে দিয়ে আমি বাইরে চলে এলাম।”
অভি, পরীর বুকের কাছে হাত রেখে আলতো চেপে জিজ্ঞেস করে, “চাঁদের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিলে তুমি?” romantic story
পরী, “সেই প্রথম চুম্বনের কথা মনে পরে গেছিল আমার। এখন আমার কপালে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে।”
অভির বাঁ হাত, তলপেটের নিচে নেমে যায়, জানুসন্ধির মাঝে নিয়ে যায় আঙ্গুল। চেপে ধরতে চেষ্টা করে পরীর নারীত্বের দ্বার। পরী বুঝতে পারে অভির বদ মতলব, ঠিক সময়ে হাত চেপে উঠিয়ে নিয়ে আসে পেতের ওপরে।
সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে পরী, “শয়তান ছেলে, প্লিস কোরো না ওই রকম।”
অভি ছাড়তে চায়না পরীকে আর পরী কাকুতি মিনতি করে অভির কাছে, “প্লিস ছেড়ে দাও সোনা, মৈথিলী চলে আসবে… ম্মম্মম্মম… আহ… কি করছ কি… ছাড় না প্লিস…”
অভি কাকুতি করে, “একটা ছোটো চুমু দিলে আমি ছেড়ে দেব।”
পরী, “এখন না প্লিস, কিন্তু কথা দিচ্ছি যে তোমার স্বপ্ন পূরণ করব।”
অভির হাত পরীর উন্নত বুকের ওপরে উঠে আসে, আলতো করে আঙ্গুল বুলিয়ে দেয় পরীর নরম বুকের ওপরে।
পরী আবার ফোঁস করে ওঠে, “তুমি শুনবে না তাই না। কেউ যদি বাইরে এসে আমাদের এই রকম অবস্থায় দেখে ফেলে না তখন জানবে কি বিপদ হবে।”
অভি, “আমি তোমাকে ছেড়ে দেব, কিন্তু কথা দাও যে আমার গুডনাইট কিস খুব মিষ্টি হবে।”
পরী, “কথা দিচ্ছি অভি… এবারে ছাড়ো।”
পরী কোনোরকমে অভির উত্তপ্ত আলিঙ্গন থেকে অনিচ্ছা সত্তেও নিজেকে মুক্ত করে চুল আর কাপড় ঠিক করে নেয়। অভির দিকে তাকায় দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে। অভি নিজেকে সামলে নেয়। পরী বন্ধ দরজায় আলতো টোকা মারে আর গোল খাকরে জানান দেয় যে ওরা উপস্থিত। romantic story
পরী, “আমরা আসতে পারি কি?”
সুব্রত, “আরে এস এস, অভি এত তাড়াতাড়ি চলে এল যে?”
সুব্রতর কাঁপাকাঁপা গলার আওয়াজ শুনে ওদের বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হল না যে সুব্রত আর মৈথিলী বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আদরের খেলায়। ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে যে, মৈথিলী সেই সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আর টুপিস নাইটড্রেসের অপরের অংশ টি মাটিতে লুটিয়ে। গায়ে ভেতরের পাতলা নুডল স্ট্রাপ স্লিপ হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে কোনোরকমে। মৈথিলীর শরীরের কমনীয় বাঁকের সাথে এমন ভাবে লেপ্টে আছে গায়ের কাপড় যেন দেখে মনে হচ্ছে যে কিছুই পরেনি মৈথিলী, ত্বকের ওপরে যেন হালকা বেগুনি রঙ করা।
অভির দৃষ্টি চলে যায় উন্নত বুকের ওপরে। ঊর্ধ্বাংশ অনেকটা অনাবৃত, দু’বুকের মাঝের বিভাজন অনেকটা দেখা যাচ্ছে, দৃষ্টি নেমে গোল পেটের ওপরে, সুগভীর নাভির অবয়াব বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে পাতলা স্লিপের ভেতর থেকে। সরু কোমরের পরে ফুলে উঠেছে পুরুষ্টু নিতম্ব, আর তারপরে পেলব জানুদ্বয়। স্লিপ টা এতই পাতলা যে অভির বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা যে মৈথিলী ওই স্লিপের ভেতরে কিছুই পরেনি।
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, “কোক পেয়েছ?”
অভি মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ মামা কোক পেয়েছি, এখন কি?”
অভি একবার মৈথিলীর মুখের দিকে তাকাল আর একবার সুব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “গল্প করতে চাও না শুতে যেতে চাও?”
মৈথিলী নিচু গলায় উত্তর দেয়, “একটু কোক খেলে ভাল হত।”
অভি পরী আর মৈথিলীকে দু গ্লাসে কোক ঢেলে দিল। সুব্রতকে জিজ্ঞেস করল, “মামা আরও এক পেগ হয়ে যাবে নাকি?”
সুব্রত, “মামা খুব বলছ, আমার ত একটা চাই ই চাই।” romantic story
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে অভি বলে, “আজ রাতে তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ আছে চুরনি।”
সুব্রত কে জিজ্ঞেস করে, “ঠিকঠাক আছো ত নাকি?”
সুব্রত মৈথিলীর নরম পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মামা একদম ঠিক,ব্যাস শোয়ার আগে এক পেগ মারব।”
অভি, “জো হুকুম জাহাপনা।”
এই বলে গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করে অভি। একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয় সুব্রতকে, নিজে ছোটো ছোটো চুমুক দেয় গ্লাসে।
সুব্রত, “হ্যাঁ তা আমাদের গল্প কোথায় থেমে ছিল।”
অভি, “সেটা ঠিক মনে নেই আমার।”
সুব্রত, “অহ হ্যাঁ, আমাদের হানিমুনের কথা। তুমি মামা গোয়া যেও কিন্তু।”
পরী ওর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়ের মতন নিজের লজ্জা টাকে আড়াল করে লাজুক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকায়। অভি ওর গালের লালিমা দেখে বুঝতে পারে যে পরীর মনে সেই পুরান চিতকুলের ছবি ভেসে উঠেছে আর হৃদয় সিক্ত হয়ে উঠেছে। অভি দেখল যে সুব্রত একবার হানিমুনের কথা শুরু করলে থামতে চাইবে না আর পরী আরও লজ্জা পাবে। কিন্তু শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল অভির মাথায়, একটু মৈথিলী কে নিয়ে মজা করার জন্য। romantic story
অভি, “হ্যাঁ মামা গোয়া কেন, অন্য জায়গা কেন নয়?”
সুব্রত, “আরে মামা গোয়ায় সুন্দর সুন্দর রোদে ঢাকা বিচ, বিশাল নীল সমুদ্র। সমুদ্র তীরে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ, অপরূপ সুন্দর মামা, গোয়ার সমুদ্র সৈকত।”
অভি, “আর কি আছে?”
মৈথিলী সুব্রতর দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকায়, সুব্রতর নেশা যেন একটু চরে গেছে বউয়ের গালের ছোঁয়ায়, “মামা আর কি বলব, বিকিনি পরা সব মেয়ে, সমুদ্রে স্নান করছে, সেই দৃশ্য আর কি ভোলা যায় মামা… উফফফ…”
মৈথিলী লজ্জা পেয়ে সুব্রতর জানুতে থাপ্পর মেরে বলে, “তুমি কি ফরেনার দের দেখছিলে?”
সুব্রত, “সত্যি বলছি মামা, ফরেনার দের যা গঠন ভারতীয়দের মানায় না বিকিনি তে। আর ভারতীয়রা খুব কম বিকিনি পরে ঘুরে বেড়ায় মামা।”
পরীর দিকে তাকাল অভি, লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে অভির হাতের কাছে হাত এনে আলতো করে আঙ্গুলে আঙ্গুল থেকায় পরী। অভির হাতে পরীর আঙ্গুলে পরশ পেয়ে যেন ঝলসে ওঠে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় মিনতি করে, “দয়া করে থামাও ওকে না হলে কিন্তু আমি চলে যাব।”
মৈথিলী উঠে বসে আর আদর করে এক থাপ্পর লাগিয়ে দেয় সুব্রতর গালে। গালে থাপ্পর খেয়ে সুব্রত মিউমিউ করে ওঠে কিন্তু বলতে ছাড়ে না, “আরে বাবা আমি কি ভুল বলছি নাকি? ভারতীয় মহিলাদের সাহস নেই ওইরকম সব বিকিনি পরে সি বিচে ঘুরে বেড়ানোর।”
পরী মৈথিলীর চোখ দেখে বুঝতে পারে যে মৈথিলী কিছু লুকাচ্ছে তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার মৈথিলী, তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে তোমার কিছু বলার আছে?”
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না আমার কিছু বলার নেই, ও বড় লজ্জার ব্যাপার আমি বলতে পারব না।”
সুব্রত মৈথিলীর সরু কোমর জড়িয়ে আদর করে ওর কানে কানে বলে, “ডারলিং তুমি না বললে কি আমি বলে দেব?”
অভি বুঝতে পারল যে ওরা গোয়ায় কিছু একটা করেছে যার জন্য মৈথিলী এত লজ্জা পাচ্ছে বলতে। অভি উৎসুক হয়ে উঠলো ঘটনা জানার জন্য আর মৈথিলী কে জিজ্ঞেস করল, “আরে বাবা আমরা এখন বন্ধুর মতন হয়ে গেছি আর লুকিয়ে কি হবে চুরনি, বলে ফেল।” romantic story
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়ায় আর সুব্রতর কাঁধের পেছনে চেহারা লুকিয়ে নেয়, “না না আমি বলতে পারব না।”
সুব্রত ওর মদের গ্লাস মৈথিলীর ঠোঁটের কাছে এনে বলে, “এক সিপ নিয়ে নাও সোনা দেখবে সব গলগল করে বের হচ্ছে।”
পরী অভির দিকে চোরা চাহনি নিয়ে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে।
মৈথিলী সুব্রতর চোখের পানে গভীর ভাবে তাকিয়ে হটাত করে গেয়ে ফেলে,
“আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবিদেখ ফির হোতা হ্যায় কেয়া…আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি…”
পরী ওর দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “কি দুষ্টুমি করেছ তোমারা?”
মৈথিলী সুব্রতর গাল দু’আঙ্গুল দিয়ে টিপে বলে, “এই দুষ্টু শয়তানটা আমার জন্যে একটা ছোট্ট লাল রঙের বিকিনি কিনেছিল, আর আমাকে জোর করে একদিন পড়িয়েছিল ওই বিকিনি। আমি বিকিনি পরে বিচে গেছিলাম।”
কথাটা বলেই মৈথিলী লজ্জায় লাল হয়ে যায় আর সুব্রতর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। সুব্রতর হাত উঠে আসে মৈথিলীর চওড়া পিঠের ওপর, মৃদু ভাবে হাত বোলাতে থাকে পিঠের ওপরে। সুব্রত ওর বউয়ের লাজুক মুখ দেখে হাসিতে ফেটে পরে, অভির দিকে তাকিয়ে যেন বলতে চায়, “মামা তোমার বউকেও ওইরকম বিকিনি পরিয়ো দারুন লাগবে মামা।”
অভি পরীর দিকে তাকায়, পরী বুঝতে পারে পভির মনের ভাব। লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে ওঠে। অভি জানে যে পরী মরে গেলেও কোনদিন সর্বসম্মুখে ওই রকমের ছোট্ট পোশাক পরে বের হবে না। romantic story
অভি যেন ওর নেশাগ্রস্থ চোকের সামনে মৈথিলীর কমনীয় পেলব শরীর টিকে লাল বিকিনি পরে দেখতে পায়। দুই উন্নত সুগোল বক্ষ যেন সেই ছোটো পোশাকের মধ্যে থেকে ফেটে বেড়িয়ে আসছে। পুর পেট অনাবৃত, গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তারপরে ফুলে উঠেছে তলপেটে আর পুরুষ্টু নিতম্বদ্বয়। ছোটো লাল রঙের কোটি আভরন মৈথিলীর নারীত্বের দোরগোড়ায় এঁটে বসে আছে। সুডৌল নিতম্ব বিভাজনের মাঝে ওই ছোটো আভরন হারিয়ে গেছে আর নরম নিতম্ব যেন ওর চোখের সামনে অনাবৃত।
খোলা চোখের সামনে এই ছবি অভিকে পাগল করে তোলে। একবারের জন্য ভাবতে চেষ্টা করে যদি ও নিজে মৈথিলীকে ওই পোশাকে দেখতে পেত তাহলে কি করত। আর ভাবতে পারে না অভি।
সুব্রতর গ্লাস খালি হয়ে এসেছে, সাথে সাথে অভিও গ্লাসের বাকি পানীয় টুকু গলায় ঢেলে নেয়। সুব্রত অভির ফাঁকা গ্লাস দেখে জিজ্ঞেস করে যে আর একটা গ্লাস হবে নাকি, সেই শুনে পরী আর মৈথিলী দু’জনে চেঁচিয়ে ওঠে, না।
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করে, “মামা কাল আমরা একটা সিনেমা দেখতে যাব, তুমি আমাদের সাথে যাবে নাকি?”
অভি মাথা নাড়ায়, “না মামা কাল আমার ইলেক্ট্রিকালের প্র্যাক্টিকাল আছে আমি যেতে পারব না মামা। আমি গেলে আমার প্র্যাক্টিকাল পার্টনার আমাকে মেরে ফেলবে।”
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মৃদু মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জানায় যে, ও দুঃখিত যে ওদের সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারবে না বলে।মৈথিলী ওকে বলে, “ঠিক আছে সেটা না হয় হল না, কিন্তু শনিবার আমরা ঢাকুরিয়ায় অমল কাকুর বাড়ি যাব, সেখানে তোমাদের দু’জনকেই যেতে হবে।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কে অমল কাকু?” romantic story
মৈথিলী, “অরুনিমার বাবা, আমি কিছু জানিন, তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছও।”
পরী ওর দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আর মৈথিলী ওর দিকে উৎসুক ভাবে তাকিয়ে। বড় দো’টানার মাঝে পরে যায় অভি, কিছু একটা বলে খান্ত করতে হবে মৈথিলীকে আর পরীকে পরে বোঝানো যাবে।
অভি, “ঠিক আছে, শনিবারের কথা শনিবারে দেখা যাবে।”
রাত অনেক হয়ে গেছে, সুব্রত মৈথিলীকে সঙ্গে করে বেড়িয়ে যায় অভির ঘর থেকে। পরী ওদের পেছন পেছন বেড়িয়ে যেতে থাকে। অভি দেখল পরী যে ওর কথা রাখছে না তাই পেছন থেকে পরীর কাঁধে হাত রাখে, ইশারায় বলতে চায় যে তুমি তোমার কথা রাখছ না। পরী কাঁধের ওপর থেকে ওর দিকে মিষ্টি করে তাকায়। সুব্রত আর মৈথিলী কিছুটা এগিয়ে গেল। পরী একটু দাঁড়িয়ে রইল তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের সামনে এনে ডগায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দিকে নাড়ে, অভি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন টাকে বুকের ওপরে মেখে নেয়।
ভগ্ন হৃদয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে চোখের ইশারায় বলে, “তুমি কথা দিয়েছিলে পরী।”
পরী মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় জানায়, “এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক সোনা।”
এই বলে পরী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
অভি বিছানার ওপরে শুয়ে পরে, গায়ের ওপরে লেপ টেনে নেয়। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর লাল ঠোঁট আর মিষ্টি হাসি। চোখ বন্ধ হয়ে যায় অভির।
কিছু নরম জিনিস যেন ওর কপালে ছুঁয়ে যায়। ঘুম ঘুম চোখ খুলে তাকায় অভি, চারদিকে তাকিয়ে দেখে যে ও একটা বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে বসে আছে। গাছের সবুজ পাতা রক্ত লাল ফুলের নিচে ঢেকে গেছে, পাতার জায়গায় শুধু লালা ফুল দেখা যাচ্ছে। গাছ থেকে একটা ফুল ওর কপালের ওপরে এসে পরে। ওর চারদিকে কৃষ্ণচুরার লাল ফুল ছড়িয়ে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে অভি, গাছটা একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, আর সবুজ ঘাসে ঢাকা সেই পাহাড়। romantic story
সামনের দিকে চোখ যায় অভির, ঘাসে ঢাকা পাহাড় নেমে গেছে সমুদ্র তীরে। ঘন নীল সমুদ্র অবিস্বাস ভাবে শান্ত, এসে মিশেছে পাহাড়ের পাদদেশে। মাথার ওপরের আকাশের রঙ ও ঘন নীল, এক ফোঁটা মেঘের দেখা নেই। দিগন্তের দিকে তাকায় অভি, কোথায় যে সমুদ্র শেষ হয়েছে আর কোথায় যে আকাশ শুরু হয়েছে সেটা ঠিক বোঝা যায় না।
অভি নিজের দিকে তাকায়, পরনে ওর প্রিয় ঘিয়ে রঙের তসরের পাঞ্জাবী আর ধাক্কা পাড়ের ধুতি। ওর সেই ডায়রিটা ওর বুকের ওপরে আধা খোলা অবস্থায় রাখা আর ওপর হাত সেই ডায়রির ওপরে। দিগন্ত থেকে একটা তীব্র সাদা আলো ওর দিকে ধেয়ে আসে। আলোর রস্মি সমুদ্র তীরে এসে থেমে যায়। সেই আলোর ছটা থেকে একটা ছয় ঘোড়ায় টানা একটা বাঁকা চাঁদ বেড়িয়ে আসে। ঘোড়া গুলো অধভুত সুন্দর দেখতে, সবার মাথার ওপরে একটা শিঙ।
একটা সুন্দরী জলপরী ওই বাঁকা চাঁদের ওপরে বসে, ওর লম্বা ঘন কালো চুল হাওয়ায় উড়ছে। চুলের দু’গোছা কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে জলপরীর উন্নত বুক দুটি ঢেকে রেখেছে।
সেই উন্নত বক্ষের নিচে চোখ যায় অভির, সুন্দর নরম গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তাঁর নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। কোমরের নিচে পায়ের জায়গায় মাছের লেজ। কোমরের নিচে শরীরের নিম্নাগ সোনালি আর রুপলি রঙের মাছের আঁশে ঢাকা। ছয় ঘোড়া বাঁকা চাঁদ টিকে টেনে নিয়ে আঁশে অভির কাছে। জল পরীর মুখের দিকে লক্ষ্য করল অভি, এযে তাঁর প্রেমিকা পরীর মুখবয়াব। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দু’হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেয় আলিঙ্গনে আহ্বান জানায় অভিকে। কাজল কালো চোখ দুটি বড় বড় হীরের মতন জলজল করছে।
হাসিতে গালে টোল পড়েছে। চুলের এক গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে এসে পড়েছে, দেখে মনে হল যেন চাঁদ এক চিলতে মেঘের আড়ালে লুকচুরি খেলে বেড়াচ্ছে। অভি জলপরী, পরীর দিকে তাকিয়ে হাসল আর উঠে চলে গেল ওর দু’বাহুর মাঝে। অভিকে জড়িয়ে ধরল পরী, পরীর প্রেমের আলিঙ্গনে অভি হারিয়ে গেল। romantic story
পরী ওর গালে চিমটি কেটে বলে, “অঃ দেখ আমি ত এ সব গুলে খেয়েছিলাম। আমি ত ঘুরতে গেছি আমার বান্ধবীদের সাথে আর তুমি ত একা একা পাহাড়ে ঘুরে বেরাচ্ছ তাই না, দুষ্টু ছেলে?” তারপরে নাক কুঁচকে অভিকে খ্যাপানোর জন্য জিজ্ঞেস করে, “কি গো অভি, শীতের রাতে কাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছ তুমি?”
অভি ওর দিকে হেসে বলে, “তোমাকে একটা ভাল গল্প বানাতে হবে কল্যানির জন্য আর তোমার মায়ের আর ছোটো মা’র জন্য। সেটা ফেরার আগে ভেবে রেখ।”
পরী, “তাঁর জন্য ভাবতে হবে না। আমি খুব সুন্দর গল্প বলতে পারি ওদের কে এমন গল্প বলব যে ওরা মুগ্ধ হয়ে যাবে।”
অভি, “হ্যাঁ তোমার গল্পের কথা আর তোমার মাথার বুদ্ধি আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না।”
পরী, “ওই দেখ তোমাকে ত আমি একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।”
অভি, “বাপরে আরও কিছু বলার বাকি আছে নাকি তোমার?”
পরী, “না বাবা না, তুমি না সবসময়ে খালি খালি ওই সব কথাই ভাবো। তোমার মৃগাঙ্কের কথা মনে আছে, সুব্রতদার বন্ধু, এক সময়ে ও হাথ ধুয়ে আমার পেছনে পরে ছিল জানো।”
অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ জানি।” romantic story
পরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জানলে কি করে?”
অভি, “মনে আছে বউভাতের আগের দিন রাতে তোমার ছোটো মা আর বাকিদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ড লেগেছিল। সেদিন রাতে আমরা মদ খেয়েছিলাম আর মদের নেশায় মৃগাঙ্ক আমাদের ওর মনের কথা বলে ফেলেছিল।”
ওরা তাড়াতাড়ি ছ’টার মধ্যেই কাল্কা পৌঁছে যায়। কাল্কা পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। অভি বলবিন্দার কে দুরে গাড়ি রাখতে নির্দেশ দেয়, যাতে কারুর চোখে ওর গাড়ি না পরে। বলবিন্দার ওদের স্টেসানের সামনে নামিয়ে দিয়ে স্টেসান চত্তর থেকে বেশ কিছু দুরে গাড়ি দাঁড় করায়।
গাড়ি থেকে নেমে সব থেকে আগে অভি মাকে ফোন করে জানায় যে ও কাল্কা পৌঁছে গেছে, কাল সকালের মধ্যে ও দিল্লী পৌঁছতে পারলে সকালের ফ্লাইট ধরবে না হলে দুপুরের ফ্লাইট ধরে বাড়ি ফিরবে। তারপরে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফেরার পথে ওর সাথে আর দেখা হবে না কেননা অভি সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাবে।
পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে ওরা হাঁটতে শুরু করে স্টেসানের দিকে। সারাক্ষণ পরী অভির হাত নিজের হাতের মধ্যে করে রাখে, মনে হয় যেন ছারলেই যদি পালিয়ে যায় অভি। স্টেসানের গেটে এসে অভি পরীর ব্যাগ পরীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পরীর দু’চোখ ছলছল করে ওঠে।
অভি তর্জনী দিয়ে কপালে আলতো টোকা মেরে বলে, “বোকা মেয়ে কাঁদছ কেন। তাড়াতাড়ি ভেতরে যাও আর কল্যাণীদের সাথে দেখা করে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এস। আমি ওই চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষা করব।” romantic story
শেষ বারের মতন দু’জনের আঙ্গুল এঁকে অপরকে ছুঁল। পরীর যেন পা আর চলছে না, অভি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গেটের সামনে, যতক্ষণ না পরী ওই গেটের মধ্যে দিয়ে হারিয়ে গেল স্টেসানের ভিড়ে।
তিরিশ মিনিট যেন তিরিশটা বছর, অধির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে অভি, কখন ফিরে আসবে পরী। মনের মধ্যে এক অজানা আলোড়ন চলছে, ভেতরে কি হচ্ছে? কল্যানি ওকে কি জিজ্ঞেস করছে? পরী ওর বান্ধবীদের কে কি বলে বের হবে? আদৌ বের হতে পারবে কিনা? শেষ দেখা কি একবারের জন্য হবে না।
কিছুক্ষণ পরে অভি দেখতে পেল যে তিন জন মহিলা গেটের বাইরে হেঁটে আসছে, ভাল করে দেখে বুঝল যে ওর মধ্যে একজন পরী। অভির তৃষ্ণার্ত প্রানে যেন জল এল। আনমনে এদিক ওদিকে তাকাল পরী, একবার ওদের চারচোখ এক হল কিন্তু পরী ওর দিকে পাত্তা না দিয়ে আবার কল্যানির সাথে গল্প করতে শুরু করে দিল। ওই দেখে অভির বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেন দুমদুম করে বাজতে শুরু করে দিল। উৎকণ্ঠায় গলা শুকিয়ে এল অভির, কি হতে চলেছে এবারে? আদৌ পরী ওর সাথে দেখা করবে ত?
বেশ কিছু সময় আরও চলে গেল, অভি ওদের দিকে আর চোখে তাকিয়ে থাকে, পরী কি করছে। পরী আড় চোখে একবার অভির দিকে তাকাল, চাহনি যেন বলছে, “সোনা একটু অপেক্ষা করো।”
কল্যাণীদের সাথে গল্প করতে করতে পরী হটাত করে কল্যানিকে ওর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। ওরা সবাই অভির দিকে এগিয়ে এল। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে যেন ভুত দেখেছে। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে হাসি থামাতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসি টিকে প্রাণপণে বুকের ভেতরে চেপে দেয়। পরী ওর দিকে চোখ টিপে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে, “আরে অভিমন্যু যে, এখানে কি করে?” romantic story
কল্যানি আর রানী ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন ওরা কোনো ভুত দেখেছে। পরীর ঠোঁটে ওর পুর নাম শুনে দাতে দাঁত চেপে নিজের হাসিটিকে সংবরণ করে। অভিকে পরী যেমন শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই রকম উত্তর দিতে হবে না হলে রানী রাগ করবেন।
অভি উত্তর দেয়, “শুক্রবার চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ ছিল, সেটা সেরে দেখলাম যে হাতে বেশ সময় আছে তাই সিমলা ঘুরতে চলে এলাম। এই এখন দিল্লী ফিরব তা মাঝ পথে একটু বিশ্রাম নেবার জন্য এখানে চা খাওয়া।”
তারপরে পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শুচিস্মিতা, তুমি এখানে কি করে?”
পরী হাসি চেপে নেয়, মনে মনে বুঝতে পারে যে যেহেতু ও ওর পুরো নাম ধরে ডেকেছে তাই অভিও ওর পুরো নাম নিয়েছে।
পরী কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কল্যানি ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উত্তর দিল, “আমরা সিমলা কুল্লু মানালি ঘুরতে এসেছিলাম আমাদের বরের সাথে আর শুচিস্মিতা ও আমাদের সাথে এসেছিল। আজ রাতে ফিরে যাচ্ছি।”
পরী কল্যানির দিকে কৃতজ্ঞ নিয়ে তাকাল। ওখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক জন জানে যে কে কে মিথ্যে বলছে, তাও পরী আর অভি প্রাণপণে বুকের এক কোনে চেপে রাখে ফুটন্ত হাসি।
রানী অভি কে জিজ্ঞেস করল, “তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না?”
মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ।” romantic story
বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যায় অভির, রানী আর কল্যানী কি করে মাকে চেনে?
“তোমরা আমার মাকে চেন?”
কল্যানি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ চিনি। আমরা ত সেই ছোটো বেলা থেকে বন্ধু, আমি আর পরী একই স্কুলে পড়েছি যেখানে উলুপি ম্যাডাম পড়ান।”
পরী দেখল যে এবারে হয়ত ওরা অভিকে প্রশ্নের জালে জড়িয়ে ধরবে, ও কল্যাণী কে চুপ করতে বলে, “কি রে তুই, ওকে কি তোরা হিটলারের মতন প্রশ্ন জালে বিদ্ধ করবি নাকি?”
তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার হাতে কি একটু সময় আছে? তুমি কি আমাদের ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত থাকতে পারবে?”
রানী পরীকে বলে, “ও থাকতে যাবে কেন? ওর দেরি হয়ে যেতে পারে। আমাদের ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে সেই মাঝ রাত, ও কি করে অত সময় আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে? ওকে যেতে দে।”
পরী অল্প বিরক্তি হয়ে উঠল, অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে রানী কে বলে, “আমার ছোটো মা’র ছেলে, অনেকদিন পরে এই অচেনা জায়গায় দেখা হয়েছে। আমি যা বলব ও তাই করবে।”
রানী ওর কথা শুনে মৃদু রেগে গেল, “যা ভালো বুঝিস তাই কর, আমি ত শুধু ওর ভালোর জন্যে বলছিলাম। ওর যদি কোনও অসুবিধে না থাকে তাহলে আমার কি অসুবিধে হতে পারে?”
অভির বুঝতে দেরি হল না যে পরী রানীর কথায় আঘাত পেয়েছে, তাই কথা ঘুরিয়ে ওদের কে জিজ্ঞেস করল যে ওদের বরেরা কোথায় গেছে। কল্যাণী উত্তর দিল যে ওদের অয়েটিং রুমে ব্যাগ দেখার দায়িত্ব দিয়ে দু’জনে মিলে কোথাও আড্ডা মারতে বেড়িয়েছে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানিয়ে দিল যে, “আমাকে একা ফেলে যদি কোথাও যাও তাহলে দেখে নিও আমি কি করি।”
অভি ওর চোখের চাহনি দেখে ওর মনের ভাব বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় যে, “আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।” romantic story
কিছুক্ষণ পরে কোথা থেকে দিপঙ্কর আর রামানুজ উদয় হল। পরীকে দেখে দিপঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার, অর্জুন বাবুর সাথে হানিমুনে কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?”
দিপঙ্করের কোথা শুনে পরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। কল্যানির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী দিপঙ্করকে মৃদু ধাক্কা মেরে জানিয়ে দিল যে অভি ওখানে উপস্থিত। দিপঙ্কর অভিকে দেখে একটু অপ্রস্তুত বোধ করল। রামানুজ হাত বাড়িয়ে দিল অভির দিকে।
অভি ওদেরকে জিজ্ঞেস করল যে ওরা এই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না কোথাও গিয়ে বসতে চায়। সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল যে কোন রেস্টুরেনটে গিয়ে বসা যেতে পারে। সবাই রেস্তুরেন্টের দিকে হাঁটতে শুরু করে, পরী আর অভি বাকিদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। পরীর মুখ গম্ভির, বুকের কাছে হাত আড় করে নিজেকে সামলে নিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে অভির পাশাপাশি চুপ করে হাঁটতে থাকে।
পরীর মনের অবস্থা দেখে অভি একটু ঘাবড়ে যায় যে আবেগের বশে পরী কিছু না উলটোপালটা করে ফেলে। বুকটা টনটন করতে শুরু করে অভির, পরী এত কাছে থেকেও কত দুরে মনে হয়। সবার সম্মুখে ওকে জড়িয়ে সান্তনা দিতে পারছেনা অভি। বড় কষ্ট হয় পরীর ব্যাথিত চেহারা দেখে।
রেস্তুরেন্টে বসে সবাই গল্প করে কে কি রকম ভাবে ঘুরল। কিছু পরে অভি কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা যখন এত খোলা মেলা হয়ে গেছি ত একটা কোথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”
কল্যাণী ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”
পরীর দিকে চোরা চাহনি তে দেখে কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, “এই অর্জুন টি কে?”
ওর প্রশ্ন শুনে কল্যাণী আর রানী একটু থমকে গেল, পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে দু’জনে মনের মধ্যে চলতে থাকে যে সঠিক উত্তর দেবে কি দেবে না। পরী হালকা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ওরা অভিমন্যু কে অর্জুনের কোথা বলতে পারে। romantic story
কল্যাণী, “সত্যি বলতে শুচিস্মিতা আমাদের কে অর্জুনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু ত জানায় নি তবে ওর মুখ থেকে যা শুনেছি তাতে মনে হল ও তোমার ইন্দ্রানি মাসির দেওর, পরীর খুঁজে পাওয়া ভালবাসার মানুষ। আমি ত এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে আমরা এত ভাল বান্ধবী তাও কেন আমাদের কাছ থেকে অর্জুনের কথা ও চেপে গেল।”
রানী পরী কে জিজ্ঞেস করল, “পরী কেই অর্জুনের কথা জিজ্ঞেস করতে দোষ কি।”
পরী অস্বাভাবিক ভাবে চুপ, বুকের মধ্যে যেন ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথা ককিয়ে উঠছে বারে বারে। খুব ধির স্বরে উত্তর দিল, “আমরা দুজনে বেশ ভালো ঘুরেছি, ব্যাস এইটুকু এখন বলতে পারি। বাকি পরে শুনে নিস তোরা।”
গল্প করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। দিপঙ্কর ঘড়ি দেখে, “আরে দশটা বাজে যে।”
ওরা রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে স্টেসানের দিকে পা বাড়ায়। পরী ওদের বলে যে ও কিছুক্ষণ আরও অভির সাথে কাটাতে চায়। কল্যাণী ওকে বাঁধা দেয় না। বাকিরা স্টেসানে ঢুকে পরে, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে পরী আর অভি।
দুজনে চুপচাপ হাইওয়ের দিকে হাঁটতে থাকে। পরীর মুখের ওপরে ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথার ছবি। মাঝ রাস্তায় অভি ওকে দাঁড় করিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হল এত চুপ করে কেন আছো?”
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে বলে, “তুমি চলে যাও।”
অভি ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে বুকের কাছে টেনে আনে। অভির হাতের ছোঁয়া পেয়ে পরী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে পরী। অভি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু পরীর কান্না আর থামতে চায় না।
কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, “সোনা তুমি চলে যাও, প্লিস। এই ঠাণ্ডার রাতে আমার ট্রেন ছেড়ে দেবে আর তুমি একা একা স্টেসানে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই দৃশ্য আমার সহ্য হবে না, আমি ভেঙ্গে পড়ব অভি। আমাকে শান্ত করার জন্য আমার বান্ধবীরা আমার সাথে থাকবে কিন্তু তুমি? আমি চলে যাবার পরে তুমি কি করে থাকবে? আমি তোমার বুকের ওই ব্যাথা সহ্য করতে পারব না অভি, প্লিস তুমি এখুনি চলে যাও।”
অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “আমার জন্য চিন্তা কোরোনা, আমি ঠিক থাকব।”
পরী, “না তুমি চলে যাও। তুমি একা একা দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত নাড়াবে সেই দেখে আমি আরও ভেঙ্গে পড়ব অভি, প্লিস চলে যাও।”
অভি, “ঠিক আছে, দেখছি কি করা যায়।”
অভি ওর চোখের জল মুছে ওকে শান্ত হয়ে অনুরধ করে। তারপরে ওরা দু’জনে স্টেসানের দিকে হাটা দেয়। স্টেসানের বাইরে এসে দেখে যে কল্যাণী আর রানী ওদের পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরীর চোখের পাতা ভিজে দেখে কল্যাণী উৎসুক হয়ে অভির দিকে তাকায়। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না, কিছুক্ষণ মাথা চুলকে উত্তর দেয় যে পরী ওর ছোটো মার কথা মনে করে মন খারাপ হয়েছে তাই চোখে জল।
কল্যাণী ওর কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারল না। অভির দিকে একভাবে চেয়ে থাকে কল্যাণী। অভি বুক দুরদুর করে ওঠে, কল্যাণী কি কিছু বুঝতে পেরে গেছে? ওরা যা ভয় পাচ্ছিল সেটা ঘটে যায়। কল্যাণী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “মনে হচ্ছে কিছু অঙ্ক আমি মেলাতে পারছি না।”
অভির দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, “আজ বিকেলে তোমাকে এখানে দেখে ঠিক অঙ্ক মেলে নি আমার। তোমার চশমা, ঠিক এই চশমা ছিল অর্জুনের চোখে তাই না। খুলে যদি বলি তাহলে অর্জুন নামে কেউ নেই, তুমি ছিলে শুচিস্মিতার সাথে। কি আমি ঠিক বলছি কি না?”
ওই কথা শুনে অভির মনে হল যেন কেউ ওর মাথার ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেকোনো সময়ে ফেটে বেড়িয়ে আসবে এমন জোরে ধুকপুক করতে শুরু করে। পরী ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে, ওরা যে ধরা পরে গেছে। দু’চোখে বন্যা নামে, পরী ওর হাত শক্ত করে ধরে নেয়, কি হবে এবারে।
কল্যাণী পরীর মুখ দেখে সব বুঝতে পেরে যায়। পরীকে জিজ্ঞেস করে, “তোর সাথে অভিমন্যু ছিল তাই ত?”
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকায়। সারা চেহারায় ফুটে ওঠে কাতর আবেদন।
কল্যাণী ওর মুখ দেখে মৃদু হেসে বলে, “চিন্তা নেই তোর। একথা কেউ জানবে না, পরী।”
ওরা সবাই মিলে অয়েটিং রুমের দিকে হাতা দিল। কল্যাণীর কথা শুনে দু’জনের বুকের ওপরে এতক্ষণ যে পাথর চাপা ছিল সেটা সরে যায়। অয়েটিং রুমে বসা, দিপঙ্কর আর রামানুজ ওদের দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। রানী ওদের কে সব কথা বলে। কথা শুনে সবাই চুপ। অভির আর পরীর ধুকপুক করতে থাকে, কি হবে কি হবে।
রানী পরীর চিবুক আঙ্গুল দিয়ে নেড়ে হেসে বলে, “অরে মেয়ে চিন্তা করিস না। এই খবর আমাদের কাছে গোপনে থাকবে।”
সবাই মাথা নেড়ে সায় জানায় যে এই কথা ওরা কাউকে জানাবে না।
কল্যাণী পরীর পাশেই বসে ছিল, ওর জড়িয়ে ধরে বলল, “তুই এত চিন্তা করছিস কেন? ওকে ভালবাসিস বলে চিন্তা করছিস না তুই ওর চেয়ে বড় বলে চিন্তা করছিস। তুই সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়ে আর ও একটা বুদ্ধিমান ছেলে। তোরা একে অপরকে ভালবাসিস, এতে পাপ কোথায়? তুই ওর সম্পর্কের মাসি হস তাই ভয়? তোদের কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। ও তোর কে হয়? তোর মায়ের মামাত দিদির, সেজ মেয়ের ছেলে। তোদের সম্পর্ক অনেক অনেক দুরের, কেউ কাউকে চিন্তিস ও না।
ওটা হয়েছে কেননা উলুপি ম্যাডাম তোর বাড়ির কাছের স্কুলে পড়ান বলে তোদের পরিরবারে সাথে সম্পর্ক, তা না হলে তোরা কেউ কাউকে চিন্তস ও না।”
দিপঙ্কর অভির পিঠ চাপড়ে বলল, “ব্রাদার এত ভয় পাবার কি আছে? তুমি ত ভায়া আমার সব থেকে সুন্দরী শালি টাকে হাত করে নিলে আর তার সাথে একা একা কোন এক দুর্গম স্থানে ঘুরেও এলে। তোমার সাহসের বলিহারি।”
পরীর ওদের কে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাল, “তোদের কি করে যে ধন্যবাদ জানাব আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না রে।”
রানী ওদের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোরা দুটি শয়তান, সময় কেমন কাটালি?”
অভির দিকে চোখ মেরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আমার বান্ধবিকে বেশি ব্যাথা দাও নি ত?”
ওর কথা শুনে লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে গেল, অভির দিকে লাজুক মুখে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হেসে ফেলল পরী। পরীর পুনরায় হসি মুখ দেখে অভির মন থেকে চিন্তার পাথর সরে যায়।
কল্যাণী পরীর গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, “তোরা তাহলে বেড়াতে গিয়ে অনেক মজা করেছিস তাই না? আমি তোর চোখের হাসি দেখে বুঝতে পেরে গেছি সুতরাং আমার কাছে লুকিয়ে বিশেষ লাভ হবে না, পরী।”
চিন্তার মেঘ কেটে গেছ, ওরা সবাই আবার ঘোরার গল্পে মেতে উঠল, কে কি রকম কোথায় কোথায় ঘুরেছে তাঁর বর্ণনা করতে শুরু করে দিল। পরীর মুখে চিতকুলের বর্ণনা শুনে ওরা চারজনে অভিভুত। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকে ওর হাত। সময় খুব দ্রুত বয়ে চলে। স্টেসানের লাউডস্পিকারে ট্রেনের আগমনের ঘোষণা শুনে ওদের সময়ের কথা মনে পরে যায়।
দিপঙ্কর আর রামানুজ ট্রেনে উঠে ওদের সিটে নিজেদের ব্যাগ পত্র রাখে। পরী অভির হাত শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে প্লাটফরমের ওপরে, ওকে ছাড়তে একদম মন চাইছে না। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কবে আবার দেখা হবে পরীর সাথে, কি করে ছেড়ে যাবে পরীকে। বুকের ভেতর টনটন করে ওঠে আসন্ন বিরহ বেদনায়। কল্যাণী পরীর কাঁধে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে ট্রেনে উঠতে। পরী অভির হাত ছাড়তে চায় না।
কান্না ভেজা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি চলে যাও, তুমি আমার কথা শুনলে না। আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমি তোমাকে একা ফেলে কি করে যাব অভি। আমি তোমাকে বার বার বলেছিলাম চলে যেতে, অভি।”
কল্যাণী পরীকে জড়িয়ে ধরে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। অভি ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গালের অপরের জলের দাগ মুছিয়ে দেয়। গালে অভির হাতের পরশ পেয়ে আরও যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে পরী।
অভি, “প্লিস ছোটো বাচ্চার মতন কাঁদে না সোনা, আমি ঠিক আছি সোনা।”
কল্যাণী অভিকে জানায় যে ও পরীকে সামলে নেবে। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে, বুকের ভেতরে বিরহের সুর বেজে ওঠে। ওর ভয় করে আবার যেন পরী অজ্ঞান না হয়ে যায়।
অভি, “আমি কথা দিচ্ছি যে এই দু’মাসে তোমার সাথে কিছু করে হক আমি দেখা করব।”
কল্যাণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “দু’মাস অনেক লম্বা সময়।” মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ কিন্তু কি করা যাবে।”
কল্যাণী পরীকে নিয়ে ট্রেনের দিকে হাটা লাগায়। কল্যাণী ট্রেনে উঠে পরে। অভি একমনে দেখতে থাকে পরীকে। এমন সময় কল্যাণীর হাত ছাড়িয়ে পরী ঘুরে দাঁড়ায়, আর দৌড়ে এসে অভির বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। অভি দুহাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পরীকে, যেন পৃথিবীর কোন শক্তি ওদের কে বিচ্ছিন্ন করেত না পারে। পরীর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। অভির বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে পরী।
ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে। পরীকে কোন মতে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে। পরী দৌড়ে ওর বান্ধবীদের কাছে চলে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেয়, পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে। পরী ওর ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, তাঁর ডগায় একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে অভির দিকে ছুঁড়ে দেয়। অভি পরীর ছোড়া সেই চুমু টা লুফে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।
অভি ডান হাতের তর্জনী উঠায় ইশারা করে “আই” তারপরে বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী মেলে ধরে, ইশারা করে “এল” শেষে মধ্যমা আর অনামিকা ফাঁক করে ইশারা করে “ইউ”।
ট্রেন ঘন কালো অন্ধকারে মিলিয়ে যায় কিছুক্ষণে মধ্যেই। অভি একা দাঁড়িয়ে থাকে খালি প্লাটফরমের ওপরে, বুক টা হুহু করে ওঠে। বাকি রাস্তা ওকে একা একা ফিরতে হবে, সাথে থাকবে না পরী। পকেট থেকে রুমাল টি বের করে একবার পরীর গায়ের গন্ধ মুখে মেখে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
তৃতীয় অধ্যায়ঃ গঙ্গাবক্ষে জোয়ার ভাঁটা
জলপরীর স্বপ্ন
অভিমন্যু তালুকদারের পরিবার বেশ সচ্ছল। দমদমে ওদের বিশাল দু’তলা বাড়ি। একতলায় একটা মারয়ারি পরিবার ভাড়া থাকে। দু’তলায় তিনটে শোবার ঘর, একটি খাবার ঘর আর একটি বশার ঘর। তিন’তলায় একটি শোবার ঘর আছে। মায়ের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, পরীর জন্য, অভিকে ওর দুতলার ঘর ছেড়ে দিতে হয়। মায়ের মেয়ের চেয়ে ভাবি বউমা বলা ভাল, যদিও অভির মনে সংশয়ের দানা বাঁধা যে মা বাবা র সম্মতি পাওয়া অনেক অনেক কষ্টকর হবে। বাবার আদেশ অমান্য করা যায় না, দু’তলায় ঘর খালি থাকলেও অভিকে তিন তলার ঘর বরাদ্দ করা হয়।
কলেজের পরীক্ষা সামনে, পরাশুনায় ডুবে যায় অভিমন্যু। রোজ রাতের বেলা পরীর কাজল কালো চোখ ওর খোলা বইয়ের পাতায় ফুটে ওঠে। গালে পরীর ঠোঁটের পরশ অনুভব করে তখন। মন যেন কেমন করে ওঠে অভির। কাল্কা তে পরী যে চুমু ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁর কথা অভির বারে বারে মনে পরে যায়, সেই চুমু টাকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে অভি। পড়তে বসে পড়ার দিকে মন থাকে না। রুমাল বের করে মাঝে মাঝে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে পরীর স্পর্শ নিতে চেষ্টা করে, মুখের ওপরে মেলে ধরে রুমাল, অনুভব করতে চেষ্টা করে পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া।
গ্রামের মেয়ে লাজুক পরী, মিলনের সময়েও একবারের জন্য নিজেকে অভির চোখের সামনে উন্মুক্ত করতে পারেনি।
দিনটা ছিল বৃহস্পতি বার, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ কমে এসেছে। আকাশে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাওয়ায় যেন ভালবাসা ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলে যাবার আগে মা অভিকে জানাল যে বিয়ের পরে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো হয়নি তাই আজ মা ওদের কে বাড়িতে ডেকেছে। অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, একবারের জন্য জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে পরী সাথে আসবে কিনা। কিন্তু কিন্তু করেও শেষ পর্যন্ত মাকে জিজ্ঞেস করে যে পরী সাথে আসছে কি না।
মা জানালেন আসতেও পারে নাও আসতে পারে পরী। পরীর আসার ঠিক নেই শুনে অভির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কলেজে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে অভির। বারেবারে পরীর চোখ বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে ওঠে।
রাতে ফিসিক্স পেপারের কোচিং ক্লাস ছিল তাই অভির বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজায় অভি। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা বারন্দা থেকে দেখলেন যে কে এসেছে।
দরজা খুলল কেউ, সামনে পরীকে দেখে হাঁ হয়ে গেল অভি। বাঁ পা চউকাঠের ভেতরে কিন্তু তারপরে আর পা ওঠে না অভির।
অভির বিস্ময়ান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে পরী। চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে ওর খোলা মুখ বন্ধ করে দিল, হেসে বলল, “মাছি ঢুকে যাবে যে!”
অভি হাঁ করে তাকিয়ে পরীর রুপ দেখে। অনেক দিন পরে পরীকে যে নতুন করে দেখছে অভি। ফর্সা কপালে, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে নীল রঙের টিপ। লম্বা ঘন কালো চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপরে থেকে সামনের দিকে নেমে এসেছে। চুলের কিছু অংশ মুখখানি কিছুটা ঢেকে রেখেছে যেন চাঁদ লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। পরনে আঁটো গাড় নীল রঙের কামিজ, বুকের নিচ থেকে ফুলে উঠে একদম হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে ঘাগরার মতন। হাসিতে গালে টোল পড়েছে আর অভির ওই হাসি দেখে মনে হল যেন এখুনি পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর লাল লাল গালে চুমু খায়।
পরী ওর মুখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপরে আঙ্গুল রেখে বলে, “আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার ভেতর টা কেমন করে উঠছে, অভি।”
অভি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরী ওকে আলতো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, “কি করছ? বাড়িতে সবাই আছে যে। দেরি দেখলে এখুনি ছোটো মা ডাক দেবে।”
চালে মত্ত ছন্দ এনে অভির কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় পরী। অভি কিছুক্ষণ ওকে পেছন থেকে দেখে, তারপরে আবার হাত বাড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। পরী দৌড়ে ওর হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বার বার পেছনে তাকিয়ে হাসে আর দুচোখ যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে, “ধরতে পারলে আমি তোমার।”
বসার ঘরে ঢুকে অভি দেখল যে বাবা মা সুব্রত মৈথিলী বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
সুব্রত ওকে দেখে বলে উঠল, “কি মামা কেমন আছো?”
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় অভি। মৈথিলীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “মামা আমি ভাল, তোমার খবর বল?”
নতুন বউ মৈথিলী কে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে, পরনে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। এই বার বেশ কাছ থেকে দেখছে মৈথিলীকে, বিয়ের সময়ে তো ঠিক করে দেখে ওঠা হয়নি নতুন বউকে। গায়ের রঙ পরীর মতন অত ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে মৈথিলীকে। বেশ খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অভি। সুব্রত ওর কাঁধ চাপড়ে ওর কলেজের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। অভি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় যে সব ঠিক চলছে।
মা জানালেন যে ওদের আনতে গিয়ে পরী ও বায়না ধরে যে আসবে তাই মা ওকেও সাথে নিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে পরী চোরা চাহনিতে অভির দিকে তাকায়, “দেখলে ত আমার বুদ্ধি।”
সামনে পরী মায়ের সাথে বসে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর খাচ্ছে। পরীর মুখে অনাবিল আনন্দ, যেন অনেক দিন পরে ও হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজে পেয়েছে।
মা ওদেরকে শোনাতে লাগ্লেন যে পরীর ঘর টাকে মা কি রকম করে সাজিয়েছেন। সব ঘরের জন্য নতুন পর্দা কেনা হয়েছে, পরীর যে রঙ ভালো লাগে সেই রঙের বিছানার চাদর কেনা হয়েছে। এমনকি ঘরের দেয়ালের রঙ পর্যন্ত পরীর পছন্দের রঙ্গে রঙ করেছে মা। অভির সেই কথা ঠিক সহ্য হল না, মায়ের যেন সব কিছু বাড়িয়ে বলার স্বভাব। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, ধিরে ধিরে পরী জানতে পারবে ওর ছোটো মা কি রকম মানুষ। অভি মাথা ব্যাথার ছল করে অখান থেকে উঠে, তিন তলায় নিজের ঘরে চলে এল।
মায়ের সবকিছু যেন বারাবারি করে বলার স্বভাব। নিজে কি করেছে না করেছে যেন সবাইকে ঢাক পিটিয়ে না বললে শান্তি হয় না মায়ের। অভির প্রতি ভালবাসা বাঁ স্নেহ যেন মা সবসময়ে পয়সা দিয়ে মাপে। মাঝে মাঝেই শোনাতে ছারে না যে যেহেতু বাবা মা ওর পড়াশুনার জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে সুতরাং ওকে ভাল রেসাল্ট করতেই হবে। জয়েন্ট পায়নি বলে ওর মুন্ডুপাত করতে ছারেনি মা। এই সব ভাবতে ভাবতে চুপ করে টেবিলের পাশে বসে থাকে অভি। এমন সময়ে দরজায় কেউ টোকা মারে।
অভি ভাবে পরী হয়ত দেখা করতে এসেছে, কিন্তু ঘুরে দেখে যে দরজায় সুব্রত দাঁড়িয়ে। সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি মামা কি ব্যাপার? সব কিছু ঠিক ত।”
অভি ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, “মামা সব ঠিক।”
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, “আজ রাতে পারটি করা যাবে কি?”
অভি উত্তর দিল, “হ্যাঁ মামা, করা যাবে। কিন্তু তুমি কি এনেছ না আমাকে নিয়ে আসতে হবে?”
সুব্রত, “না মামা আমি আনিনি, তোমাকে যোগাড় করতে হবে।”
অভি, “ঠিক আছে যোগাড় হয়ে যাবে চিন্তা কোর না।”
সুব্রত, “উলুপিদি জানতে পারবে না ত? জানতে পারলে…”
অভি ওকে আসস্থ করে, “না মামা জানতে পারবে না। রাতের বেলা কেউ উপরে আসে না। আমরা চাইলে সারা রাত ধরে গল্প করতে পারি। এই টুকু স্বাধীনতা মা আমাকে দিয়েছে যে আমার ঘরে কন বন্ধু এলে মা আমার ঘরে আসেন না। আর যাই হক, সকালে কলেজে যাবার সময়ে আমি সব বোতল নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।”
অভি মাকে বলল যে ও আর সুব্রত একটু বাইরে যাচ্ছে। মৈথিলী আর পরী ওদের দু’জনার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল।
মৈথিলী সুব্রতর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাওয়া হচ্ছে? যেখানেই যাচ্ছ বেশি দেরি করবে না, খাওয়ার আগেই চলে আসবে।”
সুব্রতর হয়ে অভি উত্তর দিল, “চিন্তা করও না আমি তোমার বর কে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমরা খাওয়ার আগেই ফিরে আসব।”
পরী মৈথিলী কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি জানি তোমরা কোথায় যাচ্ছ।”
অভি বুঝতে পারল যে পরী বুঝে গেছে তাই চুপ করার জন্য ওকে ধমকের সুরে বলল, “ঠিক আছে হয়েছে, এবারে ভেতরে যাও তুমি।”
অ্যালকোহল কিনতে বেড়িয়ে গেল ওরা। বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকানে পেয়ে যেতে পারে না পেলে খান্না না হয় দমদম স্টেসানের কাছে যেতে হবে।
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা মামা তুমি অরুনিমার ওপরে কি জাদু করেছ? বারবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।”
অভি মাথা চুলকায়, অরুনিমা কে অরুনিমা? তারপরে মনে পরে, হ্যাঁ সুব্রতর শ্যালিকা অরুনিমা, দক্ষিণ কোলকাতায় থাকে, বউভাতের দিন দেখা হয়েছিল।
সুব্রত ওর মুখ দেখে বলে, “কি মামা, অরুনিমাকে ভুলে গেলে? আমার সেই সুন্দরী শ্যালিকা, বউভাতের দিনে দেখা হয়েছিল তোমার সাথে।”
অভি, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, অরুনিমার কথা।”
সুব্রত, “কি মামা, তুমি আমার অমন সাধের শালিকাকে ভুলে গেলে। ও তোমার কথা কত জিজ্ঞেস করেছিল।”
অভির অসব কথা ঠিক পছন্দ হয় না, তাই কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মামা তুমি বল তোমার হানিমুন কেমন গেল। হানিমুনে গিয়ে চুরনির সাথে কি কি খেলা করলে।”
সুব্রত, “মামা গোয়া দারুন জায়গা। শীতকালে ত আরও সুন্দর মামা। অইসব রোদে ঢাকা বিচ আর তাঁর ওপরে বিকিনি পরা মেয়েছেলেরা। মামা কি যে বলব, চোখের যে কি সুখ, বলে বুঝাতে পারব না।”
অভি, “ত তুমি বউকে ছেড়ে ওই বিকিনি পরা মেয়েদের দেখছিলে?”
সুব্রত, “মামা, বিউটি দেখা ভাল, টাচ না করলেই হল।”
অভি, “তাঁর মানে কি চুরনি সুন্দরী নয়?”
সুব্রত, “না না না আমার মানে সেটা নয়…”
সুব্রত শুরু করল ওদের হানিমুনের গল্প। দমদম থেকে ওরা অ্যালকোহল কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফেরা শুরু করল। ফেরার পথে আবার সুব্রতর মুখে অরুনিমার কথা।
সুব্রত, “অরুনিমা আমাকে বলেছিল যে ও নাকি তোমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়েছে আর তুমি নাকি এক বারও ফোন করনি?”
অভি, “মামা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওর কথা ত আমি কি করে ওকে ফোন করব। যাই হক ও অত বার করে আমার কথা কেন জিজ্ঞেস করছিল?”
সুব্রত, “আরে মামা, না জানার ভান কোরনা একদম। তুমি ওকে কি জল খাইয়েছ সেটা তুমি জানো।”
অভি ওকে মজা করে বলল, “মামা আর একবার অরুনিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও তারপরে দ্যাখ তোমার শালির অবস্থা কি করি।”
সুব্রত জোরে হেসে ফেলল, “মামা অরুনিমা তোমার সাথে দেখা করার জন্য পাগল। আমি তোমার ফোন নাম্বার ওকে দেইনি এই ভেবে যে তুমি কি ভাববে তাই। যাই হক আমি তোমার কথা অরুনিমার কাছে পৌঁছে দেব।”
বাড়ি ফিরে দেখল, যে খাবার তৈরি। মা জানালেন যে পরী মায়ের সাথে শোবে। পরীর ঘরে সুব্রত আর মৈথিলী বাবার জায়গা গেস্ট রুমে। খাবার পরে সুব্রত আর অভি তিন তলায় অভির ঘরে চলে যায়, ড্রিঙ্ক পার্টি শুরু করার জন্য।
অভি আর সুব্রত মুখমুখি বিছানার ওপরে বসে। অভি বিছানার ওপরে খবরের কাগজ পেতে দেয় তার ওপরে বোতল আর গ্লাস রাখে। সুব্রত প্রথম পানের গ্লাস তৈরি করে অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।
অভি, “চিয়ারস ফর হানিমুন মামা।”
সুব্রতর কিছুক্ষণ পরেই নেশা চরে যায়, “কি জায়গা মামা, কি যে বলব।”
অভি, “তুমি মামা শুধু বিচ আর বিউটি দেখেছ? তোমার চুরনির বিউটি দেখনি?”
সুব্রত, “চুরনি চুরনি চুরনি… আমার স্বপ্নের সেক্সি বউ।”
অভি, “আমি জানি তোমার সেক্সি বউ, তারপর কি হল?”
সুব্রত, “মামা হানিমুনে তুমিও গোয়া যেও।”
অভি মনে মনে বলে, “আমার সমুদ্র সৈকত পছন্দ করে না, পাহাড় পছন্দ করে। হানিমুন ত আমরা পাহারে কাটিয়ে এসেছি।” অভি ওকে বলে, “না মামা, আমার পাহাড় পছন্দ, আমি আমার বউকে নিয়ে হানিমুনে পাহাড়েই যাবো।”
গল্প চলতে থাকে, রাত এগারটা বেজে যায় গল্প করতে করতে। কলকাতার ফেব্রুয়ারি মাসের শীত বড় মিষ্টি। কিন্তু আজ মদের নেশায় আর মৈথিলীর রুপ যেন ওর শরীর গরম করে দিয়েছে। গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে দেয় অভি। চোখের সামনে এক কমনীয় নারী মূর্তি ভেসে ওঠে, কে ও পরী না মৈথিলী?
সুব্রত আর অভি দুজনের নেশা আজ ঠিক ঠাক, নিজেদের আয়ত্তে আছে এখন, বউভাতের আগের দিনের রাতের মতন চুরান্ত অবস্থায় এখন পৌঁছায়নি ওরা। কিছুক্ষণ পরে দুজনেই চুপ, যেন আর কিছু বলার নেই। এক এক চুমুক গ্লাসে দিতে দিতে এঁকে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে লাল লাল চোখে।
ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। মৈথিলী দরজার পাল্লা ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে, পেছন পেছন পরী।
মৈথিলী বোতল আর গ্লাস দেখে আঁতকে ওঠে, “কি হচ্ছে এ সব। আমি ত ভাবছিলাম যে তোমারা এমনি গল্প গুজব করছ, ঘুণাক্ষরে ও ভাবতে পারিনি যে তোমরা দারুর বোতল নিয়ে বসবে, সেই রাতের কথা মনে নেই তোমাদের?”
নেশায় ঢুলু ঢুলু অভির চোখের সামনে দুই সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে। মৈথিলীর পরনে একটা হালকা বেগুনি রঙের টু’পিস নাইটড্রেস। কোমরের কাছে বেল্ট দিয়ে বাঁধা থাকার দরুন উন্নত বুখ দুটি যেন ফুলে উঠেছে। ভেতরের নাইটড্রেস টা মনে হয় হাতকাটা এবং ছোটো। মাঝে মাঝে অপরের অংশের ফ্লাপ খুলে যাওয়ার দরুন মসৃণ পা বেড়িয়ে পড়ছে। মাথার চুল খোলা, চোখে যেন আগুন। কটমট করে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে আছে। পরী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে পরনে সাদা রঙের পাতলা একটা নাইট ড্রেস। পরীর পেলব শরীরের সাথে লেপটে রয়েছে গায়ের কাপড়। পরী পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে মৈথিলীর কোমর আর ওর কাঁধের ওপরে থুতনি রেখে মিটিমিটি করে অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
অভির নেশার চোখে ঠাহর করতে পারছে না যে এই রাতে কাকে বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে, পরী না মৈথিলী। পরী মত্ত চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দেয় আর জিব দিয়ে অপরের ঠোঁট চেটে নেয়। অভির হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে পরীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। সুব্রত মৈথিলীর দিকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সুযোগ পেলে যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে মৈথিলীর ওপরে আর কুটিকুটি করে ছিঁড়ে খাবে ওর কমনীয়তা। পরী যেহেতু মৈথিলীর বুকের নিচে হাত দিয়ে থাকে তাই মৈথিলীর বুক দুটি অস্বাভাবিক রুপে সামনের দিকে ঠেলে ওঠে। সুব্রত আর অভির দু’জনের সেই উন্নত বক্ষ দেখে শিরায় শিরায় উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পরে। romantic story
অভি ওদের রুপ লাবন্য দেখে আর থাকতে পারে না। পরীর হাসি যেন ওর বুকের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা অভি, ওর ওই লাল লাল গালে চুমু খেতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাত মৈথিলীর দিকে ছড়িয়ে দিয়ে, দু’চোখ পরীর চোখের ওপরে নিবদ্ধ করে গান গেয়ে ওঠে,
“এয়সে না মুঝে তুম দেখো…সিনে সে লগা লুঙ্গা…তুমকো মেয় চুরা লুঙ্গা তুমসে…দিল মে ছুপা লুঙ্গা…”
ওর গান শুনে মৈথিলী একটু থমকে যায়। দুজনেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। পরী বুঝতে পারে যে গান টা অভি ওর জন্য গেয়েছে, কিন্তু লজ্জায় মৈথিলী নিজের মুখ দুহাতে ঢেকে নেয়। সুব্রত লাফিয়ে নেমে পরে বিছানা থেকে আর অভির কান ধরে উঠিয়ে দেয়।
সুব্রত, “আবে কুত্তা, আমার বউকে লাইন মারা হচ্ছে?”
অভি মনে মনে বলে, “মামা আমি তোমার বউকে কেন লাইন মারতে যাব। আমার বউ যে তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে, আমি গান ত আমার বউয়ের জন্য গেয়েছি।”
কিন্তু সুব্রতর সাথে মজা করার জন্য বলে, “মামা চুরনি কে দেখে আর থাকতে পারলাম না মামা, আচমকা গান টা বুক থেকে বেড়িয়ে গেল।”
সবাই হেসে ওঠে ওর কথায়। তারপরে সবাই বসে পরে বিছানার ওপরে। মৈথিলী সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে আর সুব্রত মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে থাকে। জড়াজড়ি করার ফলে মৈথিলীর পরনের কাপড় হাটুর ওপরে উঠে আসে আর মসৃণ বাঁকা পায়ের গুচ্ছ নেশাগ্রস্ত অভির চোখের বেড়িয়ে পরে। সেই দৃশ্য দেখে অভির গালার কাছে উত্তেজনা দলা পাকিয়ে যায়। সুব্রতর আদরের চটে মৈথিলীর চোখ কিঞ্চিত বন্ধ হয়ে আসে। পরী আর অভি জানে যে ওদের সামনে ওরা প্রেমিক প্রেমিকা নয় তাই ওরা দুজনে একটু দুরে দুরে বসে।
পরীর মনে অভির মুখ দেখে বড় কষ্ট হয়, এত কাছে থাকা সত্তেও ও ওর কোলে মাথা রেখে শুতে পারছে না। হৃদয়ের ভেতর টা যেন কেঁদে ওঠে পরীর। শুধু দুজন দুজনার দিকে চোরা চাহনিতে প্রেম নিবেদন ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।
মৈথিলী অভিকে বলে, “অভিমন্যু তুমি আমার বরকে মাতাল বানিয়ে ছাড়লে।”
অভি, “আরে চুরনি, আমার সাথে দেখা হওয়ার আগে থেকে তোমার বর ড্রিঙ্ক করে।”
মৈথিলী ওর কথা শুনে সুব্রতর দিকে কটমট করে তাকায়, এই যেন খেয়ে ফেলবে। সুব্রত বিব্রত বোধ করে, মৈথিলীকে শান্ত করার জন্য বলে, “না গো, আমি একদম ড্রিঙ্ক করি না, এই শুধু বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান হলে করে ফেলি।”
মৈথিলী, “আজ বিশেষ কোন অনুষ্ঠান আছে শুনি?”
সুব্রত, “বাঃ রে, আজকে ত বেশ বড় দিন। উলুপিদি আমাদের নেমন্তন্ন করেছে, অভিমন্যুর সাথে দেখা হল, আমাদের হানিমুন ভাল কেটেছে… আরও কত কিছু আছে বেবি।”
অভি, “পিনেঅয়ালে কো পিনে কা বাহানা চাহিয়ে, মাতালের শুধু মাত্র একটা ফাঁক দরকার, চুরনি।”
পরী আর মৈথিলী দুজনেই অভির কথা শুনে হেসে ফেলল। মৈথিলী সুব্রতকে বলল, “আর গলায় না ঢেলে আমার সাথে শুতে এসো তাড়াতাড়ি।”
মৈথিলীর দিকে দেখল অভি, মৈথিলী একটু বিরক্তি ভরা চোখে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে।
অভি ওকে খ্যাপানর জন্য বলল, “রাতের জন্য তর সইছেনা চুরনি? রাতে শোবে না জেগে কাটাবে?”
ওর কথা শুনে মৈথিলীর মুখ আবার লজ্জায় লালা হয়ে ওঠে। পরী বিরক্ত হয়ে অভিকে বকে, “তুমি চুপ করবে না হলে আমি কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলব।”
অভি পরীর দিকে ফিরে মাথা নুইয়ে ইশারায় জানায়, “তোমার হাতে মরার জন্য আমি কবে থেকে তৈরি।”
সুব্রত মৈথিলীকে অনুনয় করে, “প্লিস প্লিস প্লিস, আর একটা গ্লাস, ব্যাস তারপরে আমি তোমার বাহুতে।”
পরী অভিমান করে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা গিলবে ওই সব আর আমরা কি আঙ্গুল চুষব?”
সুব্রত, “আরে না না, তোরা কোক খেতে পারিস।”
কোকের বতলের দিকে তাকিয়ে দেখল যে বোতল খালি। পরী খালি বোতল টা ওদের নাকের সামনে নাড়িয়ে বলল, “আমরা কি খালি জল খাব? তা হবে না।”
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, “মামা কি করা যায়, এই রাতে এদের জন্য কিছু যোগাড় করতে হবে যে না হলে আমি ত রাতে শুতে পারব না মামা।”
অভি আবার গেয়ে উঠল,
“কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা…কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা…এক দো চার নেহি সারা শহর হ্যায় পিনে ওয়ালা…”
কবিতা শুনে সুব্রত বলে উঠল, “অয়াহ অয়াহ… কেয়া বাত হ্যায়, তাহলে যাও মামা এক লিটার কোক নিয়ে এস।”
রাত সাড়ে বারটা বাজে, অভি একবার ঘড়ি দেখল একবার পরী কে দেখল। তারপরে দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়ে বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকান থেকে এক বোতল কোক কিনে আনল।
হাপাতে হাপাতে সিঁড়ি চরে ছাদে উঠে লক্ষ্য করে যে পরী খালি ছাদের দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে একমনে তারা দেখছে। আকাশে বাঁকা চাঁদ, মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে লুকোচুরি খেলছে।
পরীর হাত বুকের কাছে ভাঁজ করা। সেই অন্ধকার রাতের মৃদু আলোতে পরীকে যেন স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে। পরনের পাতলা কাপড় ওর ত্বকের সাথে লেপ্টে রয়েছে, কাঁধ অনাবৃত। হাত আর কাঁধের মসৃণ ত্বকের ওপরে রাতের মৃদু আলো পিছলে যাচ্ছে যেন। চওরা পিঠের পরে পরীর পাতলা কোমরের দিকে অভির ক্ষুধার্ত চোখ গেল। ঠিক পাতলা কোমরের নিচে ফুলে উঠেছে কোমল নিতম্ব। পরনের কাপড় এত পাতলা যে পরীর শরীরের প্রতিটি বাঁক ফুটে উঠে ওর ক্ষুধার্ত চোখের সামনে উন্মুক্ত।
মাথার চুল খোলা, হাওয়ায় উড়ে মাঝে মাঝে ওর সুন্দর মুখের ওপরে চলে আসছে। পরীর কোমল শরীর দেখে অভির মাথার মধ্যে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। বুকের মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগে যে এখুনি ওকে বাহুপাসে নিয়ে মত্ত খেলায় রত হয় অভি।
পা টিপে টিপে পরীর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় অভি। হৃদয় ওকে সাবধান করে, “কি করতে চলেছ অভি, সময় ঠিক নয়।”
পরী রাতের আকাশ দেখতে এত বিভোর ছিল যে টের পায় না যে অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। অভির মাথা ওকে থামতে বারন করে, বলে, “কি বোকা তুমি। তোমার প্রেমিকা একা একা দাঁড়িয়ে তোমার সামনে আর তুমি বোকার মতন চেয়ে দেখছ? যাও জড়িয়ে ধর।”
অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ নামিয়ে গোল কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। আচমকা কারুর ঠোঁটের পরসে পরী চমকে ওঠে, তারপরে পেছনে মাথা হেলিয়ে অভি কে জিজ্ঞেস করে, “কখন এলে?”
অভি ওর পেটের ওপরে হাত রাখে, আর আলতো করে পেটের নরম মাংসে চাপ দেয়। ধিরে ধিরে অভির হাত পেটের নিচে নামতে শুরু করে। তলপেটের ঠিক নিচে আর জানুসন্ধির ঠিক ওপরে বাঁ হাত রাখে অভি। ডান হাত পরীর বুকের মাঝখান থেকে নিয়ে গলা ধরে পেছন দিকে চেপে নেয় যাতে ওর গাল অভির গালে লাগে। পরী ওর উত্তপ্ত বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে প্রেমের আবেগে কেঁপে ওঠে।
অভি মৃদুকনে ওর কানে কানে বলে, “অনেকক্ষণ আগে সোনা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে সাম্লাতে পারলাম না, সোনা।”
পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে, “ম্মম্মম্মম… কি করছ কি? সুব্রতদা আর মৈথিলী তোমার রুমে আছে।”
ধরা পরে যেতে পারে এই ভয়টা যেন অভিকে আরও পাগল করে তোলে। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে আর কানের লতিতে চুমু খেতে শুরু করে। ধিরে ধিরে ওর নরম গালে গাল ঘষতে থাকে অভি, ত্বকের ঘর্ষণের ফলে দু’জনের শরীর থেকে আগুনের ফুল্কি বের হয়ে শুরু করে দেয়। অভির শয়তান হাত পরীর পুরুষ্টু নিতম্বের ওপরে খেলা করতে শুরু করে। কাপড়ের ওপর থেকে ছুঁয়ে বুঝতে পারে যে পরীর নাইটড্রেসের নিচে কিছুই পরেনি। সেটা ভেবেই অভির মাথার মধ্যে বাসনার রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠে।
হাতের মধ্যে পিষে ফেলে একটা নিতম্ব বলয়। পরী থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়, হাত পেছনে নিয়ে অভির চুলে মুঠি করে ধরে। অভি ওর নিতম্বের খাজের মধ্যে নিজের কঠিন সিংহ টিকে চেপে ধরে। পরী উত্তপ্ত সিংহের স্পর্শে কেঁপে ওঠে বারংবার।
অভি পরীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলত, তুমি আমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে, তাই না?”
পরী প্রেমঘন মৃদুকনে উত্তর দেয়, “অভি আমার সারা শরীর কিছু হচ্ছে, অভি আমাকে ছেড়ে দাও প্লিস। ওরা যদি বেড়িয়ে আসে তাহলে আমরা খুব বিপদে পরে যাব।”
অভি, “তাহলে একা একা এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?”
পরী, “তুমি চলে গেলে, আমার খুব একা লাগছিল। ওরা দুজনে প্রেম শুরু করে দিল তাই ওদের ছেড়ে দিয়ে আমি বাইরে চলে এলাম।”
অভি, পরীর বুকের কাছে হাত রেখে আলতো চেপে জিজ্ঞেস করে, “চাঁদের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিলে তুমি?”
পরী, “সেই প্রথম চুম্বনের কথা মনে পরে গেছিল আমার। এখন আমার কপালে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে।”
অভির বাঁ হাত, তলপেটের নিচে নেমে যায়, জানুসন্ধির মাঝে নিয়ে যায় আঙ্গুল। চেপে ধরতে চেষ্টা করে পরীর নারীত্বের দ্বার। পরী বুঝতে পারে অভির বদ মতলব, ঠিক সময়ে হাত চেপে উঠিয়ে নিয়ে আসে পেতের ওপরে।
সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে পরী, “শয়তান ছেলে, প্লিস কোরো না ওই রকম।”
অভি ছাড়তে চায়না পরীকে আর পরী কাকুতি মিনতি করে অভির কাছে, “প্লিস ছেড়ে দাও সোনা, মৈথিলী চলে আসবে… ম্মম্মম্মম… আহ… কি করছ কি… ছাড় না প্লিস…”
অভি কাকুতি করে, “একটা ছোটো চুমু দিলে আমি ছেড়ে দেব।”
পরী, “এখন না প্লিস, কিন্তু কথা দিচ্ছি যে তোমার স্বপ্ন পূরণ করব।”
অভির হাত পরীর উন্নত বুকের ওপরে উঠে আসে, আলতো করে আঙ্গুল বুলিয়ে দেয় পরীর নরম বুকের ওপরে।
পরী আবার ফোঁস করে ওঠে, “তুমি শুনবে না তাই না। কেউ যদি বাইরে এসে আমাদের এই রকম অবস্থায় দেখে ফেলে না তখন জানবে কি বিপদ হবে।”
অভি, “আমি তোমাকে ছেড়ে দেব, কিন্তু কথা দাও যে আমার গুডনাইট কিস খুব মিষ্টি হবে।”
পরী, “কথা দিচ্ছি অভি… এবারে ছাড়ো।”
পরী কোনোরকমে অভির উত্তপ্ত আলিঙ্গন থেকে অনিচ্ছা সত্তেও নিজেকে মুক্ত করে চুল আর কাপড় ঠিক করে নেয়। অভির দিকে তাকায় দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে। অভি নিজেকে সামলে নেয়। পরী বন্ধ দরজায় আলতো টোকা মারে আর গোল খাকরে জানান দেয় যে ওরা উপস্থিত।
পরী, “আমরা আসতে পারি কি?”
সুব্রত, “আরে এস এস, অভি এত তাড়াতাড়ি চলে এল যে?”
সুব্রতর কাঁপাকাঁপা গলার আওয়াজ শুনে ওদের বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হল না যে সুব্রত আর মৈথিলী বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আদরের খেলায়। ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে যে, মৈথিলী সেই সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আর টুপিস নাইটড্রেসের অপরের অংশ টি মাটিতে লুটিয়ে। গায়ে ভেতরের পাতলা নুডল স্ট্রাপ স্লিপ হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে কোনোরকমে। মৈথিলীর শরীরের কমনীয় বাঁকের সাথে এমন ভাবে লেপ্টে আছে গায়ের কাপড় যেন দেখে মনে হচ্ছে যে কিছুই পরেনি মৈথিলী, ত্বকের ওপরে যেন হালকা বেগুনি রঙ করা।
অভির দৃষ্টি চলে যায় উন্নত বুকের ওপরে। ঊর্ধ্বাংশ অনেকটা অনাবৃত, দু’বুকের মাঝের বিভাজন অনেকটা দেখা যাচ্ছে, দৃষ্টি নেমে গোল পেটের ওপরে, সুগভীর নাভির অবয়াব বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে পাতলা স্লিপের ভেতর থেকে। সরু কোমরের পরে ফুলে উঠেছে পুরুষ্টু নিতম্ব, আর তারপরে পেলব জানুদ্বয়। স্লিপ টা এতই পাতলা যে অভির বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা যে মৈথিলী ওই স্লিপের ভেতরে কিছুই পরেনি। romantic story
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, “কোক পেয়েছ?”
অভি মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ মামা কোক পেয়েছি, এখন কি?”
অভি একবার মৈথিলীর মুখের দিকে তাকাল আর একবার সুব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “গল্প করতে চাও না শুতে যেতে চাও?”
মৈথিলী নিচু গলায় উত্তর দেয়, “একটু কোক খেলে ভাল হত।”
অভি পরী আর মৈথিলীকে দু গ্লাসে কোক ঢেলে দিল। সুব্রতকে জিজ্ঞেস করল, “মামা আরও এক পেগ হয়ে যাবে নাকি?”
সুব্রত, “মামা খুব বলছ, আমার ত একটা চাই ই চাই।”
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে অভি বলে, “আজ রাতে তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ আছে চুরনি।”
সুব্রত কে জিজ্ঞেস করে, “ঠিকঠাক আছো ত নাকি?”
সুব্রত মৈথিলীর নরম পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মামা একদম ঠিক,ব্যাস শোয়ার আগে এক পেগ মারব।”
অভি, “জো হুকুম জাহাপনা।”
এই বলে গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করে অভি। একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয় সুব্রতকে, নিজে ছোটো ছোটো চুমুক দেয় গ্লাসে।
সুব্রত, “হ্যাঁ তা আমাদের গল্প কোথায় থেমে ছিল।”
অভি, “সেটা ঠিক মনে নেই আমার।”
সুব্রত, “অহ হ্যাঁ, আমাদের হানিমুনের কথা। তুমি মামা গোয়া যেও কিন্তু।”
পরী ওর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়ের মতন নিজের লজ্জা টাকে আড়াল করে লাজুক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকায়। অভি ওর গালের লালিমা দেখে বুঝতে পারে যে পরীর মনে সেই পুরান চিতকুলের ছবি ভেসে উঠেছে আর হৃদয় সিক্ত হয়ে উঠেছে। অভি দেখল যে সুব্রত একবার হানিমুনের কথা শুরু করলে থামতে চাইবে না আর পরী আরও লজ্জা পাবে। কিন্তু শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল অভির মাথায়, একটু মৈথিলী কে নিয়ে মজা করার জন্য।
অভি, “হ্যাঁ মামা গোয়া কেন, অন্য জায়গা কেন নয়?”
সুব্রত, “আরে মামা গোয়ায় সুন্দর সুন্দর রোদে ঢাকা বিচ, বিশাল নীল সমুদ্র। সমুদ্র তীরে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ, অপরূপ সুন্দর মামা, গোয়ার সমুদ্র সৈকত।”
অভি, “আর কি আছে?”
মৈথিলী সুব্রতর দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকায়, সুব্রতর নেশা যেন একটু চরে গেছে বউয়ের গালের ছোঁয়ায়, “মামা আর কি বলব, বিকিনি পরা সব মেয়ে, সমুদ্রে স্নান করছে, সেই দৃশ্য আর কি ভোলা যায় মামা… উফফফ…”
মৈথিলী লজ্জা পেয়ে সুব্রতর জানুতে থাপ্পর মেরে বলে, “তুমি কি ফরেনার দের দেখছিলে?”
সুব্রত, “সত্যি বলছি মামা, ফরেনার দের যা গঠন ভারতীয়দের মানায় না বিকিনি তে। আর ভারতীয়রা খুব কম বিকিনি পরে ঘুরে বেড়ায় মামা।”
পরীর দিকে তাকাল অভি, লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে অভির হাতের কাছে হাত এনে আলতো করে আঙ্গুলে আঙ্গুল থেকায় পরী। অভির হাতে পরীর আঙ্গুলে পরশ পেয়ে যেন ঝলসে ওঠে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় মিনতি করে, “দয়া করে থামাও ওকে না হলে কিন্তু আমি চলে যাব।”
মৈথিলী উঠে বসে আর আদর করে এক থাপ্পর লাগিয়ে দেয় সুব্রতর গালে। গালে থাপ্পর খেয়ে সুব্রত মিউমিউ করে ওঠে কিন্তু বলতে ছাড়ে না, “আরে বাবা আমি কি ভুল বলছি নাকি? ভারতীয় মহিলাদের সাহস নেই ওইরকম সব বিকিনি পরে সি বিচে ঘুরে বেড়ানোর।”
পরী মৈথিলীর চোখ দেখে বুঝতে পারে যে মৈথিলী কিছু লুকাচ্ছে তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার মৈথিলী, তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে তোমার কিছু বলার আছে?”
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না আমার কিছু বলার নেই, ও বড় লজ্জার ব্যাপার আমি বলতে পারব না।”
সুব্রত মৈথিলীর সরু কোমর জড়িয়ে আদর করে ওর কানে কানে বলে, “ডারলিং তুমি না বললে কি আমি বলে দেব?”
অভি বুঝতে পারল যে ওরা গোয়ায় কিছু একটা করেছে যার জন্য মৈথিলী এত লজ্জা পাচ্ছে বলতে। অভি উৎসুক হয়ে উঠলো ঘটনা জানার জন্য আর মৈথিলী কে জিজ্ঞেস করল, “আরে বাবা আমরা এখন বন্ধুর মতন হয়ে গেছি আর লুকিয়ে কি হবে চুরনি, বলে ফেল।”
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়ায় আর সুব্রতর কাঁধের পেছনে চেহারা লুকিয়ে নেয়, “না না আমি বলতে পারব না।”
সুব্রত ওর মদের গ্লাস মৈথিলীর ঠোঁটের কাছে এনে বলে, “এক সিপ নিয়ে নাও সোনা দেখবে সব গলগল করে বের হচ্ছে।”
পরী অভির দিকে চোরা চাহনি নিয়ে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে।
মৈথিলী সুব্রতর চোখের পানে গভীর ভাবে তাকিয়ে হটাত করে গেয়ে ফেলে,
“আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবিদেখ ফির হোতা হ্যায় কেয়া…আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি…”
পরী ওর দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “কি দুষ্টুমি করেছ তোমারা?”
মৈথিলী সুব্রতর গাল দু’আঙ্গুল দিয়ে টিপে বলে, “এই দুষ্টু শয়তানটা আমার জন্যে একটা ছোট্ট লাল রঙের বিকিনি কিনেছিল, আর আমাকে জোর করে একদিন পড়িয়েছিল ওই বিকিনি। আমি বিকিনি পরে বিচে গেছিলাম।”
কথাটা বলেই মৈথিলী লজ্জায় লাল হয়ে যায় আর সুব্রতর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। সুব্রতর হাত উঠে আসে মৈথিলীর চওড়া পিঠের ওপর, মৃদু ভাবে হাত বোলাতে থাকে পিঠের ওপরে। সুব্রত ওর বউয়ের লাজুক মুখ দেখে হাসিতে ফেটে পরে, অভির দিকে তাকিয়ে যেন বলতে চায়, “মামা তোমার বউকেও ওইরকম বিকিনি পরিয়ো দারুন লাগবে মামা।”
অভি পরীর দিকে তাকায়, পরী বুঝতে পারে পভির মনের ভাব। লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে ওঠে। অভি জানে যে পরী মরে গেলেও কোনদিন সর্বসম্মুখে ওই রকমের ছোট্ট পোশাক পরে বের হবে না।
অভি যেন ওর নেশাগ্রস্থ চোকের সামনে মৈথিলীর কমনীয় পেলব শরীর টিকে লাল বিকিনি পরে দেখতে পায়। দুই উন্নত সুগোল বক্ষ যেন সেই ছোটো পোশাকের মধ্যে থেকে ফেটে বেড়িয়ে আসছে। পুর পেট অনাবৃত, গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তারপরে ফুলে উঠেছে তলপেটে আর পুরুষ্টু নিতম্বদ্বয়। ছোটো লাল রঙের কোটি আভরন মৈথিলীর নারীত্বের দোরগোড়ায় এঁটে বসে আছে। সুডৌল নিতম্ব বিভাজনের মাঝে ওই ছোটো আভরন হারিয়ে গেছে আর নরম নিতম্ব যেন ওর চোখের সামনে অনাবৃত।
খোলা চোখের সামনে এই ছবি অভিকে পাগল করে তোলে। একবারের জন্য ভাবতে চেষ্টা করে যদি ও নিজে মৈথিলীকে ওই পোশাকে দেখতে পেত তাহলে কি করত। আর ভাবতে পারে না অভি।
সুব্রতর গ্লাস খালি হয়ে এসেছে, সাথে সাথে অভিও গ্লাসের বাকি পানীয় টুকু গলায় ঢেলে নেয়। সুব্রত অভির ফাঁকা গ্লাস দেখে জিজ্ঞেস করে যে আর একটা গ্লাস হবে নাকি, সেই শুনে পরী আর মৈথিলী দু’জনে চেঁচিয়ে ওঠে, না।
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করে, “মামা কাল আমরা একটা সিনেমা দেখতে যাব, তুমি আমাদের সাথে যাবে নাকি?”
অভি মাথা নাড়ায়, “না মামা কাল আমার ইলেক্ট্রিকালের প্র্যাক্টিকাল আছে আমি যেতে পারব না মামা। আমি গেলে আমার প্র্যাক্টিকাল পার্টনার আমাকে মেরে ফেলবে।”
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মৃদু মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জানায় যে, ও দুঃখিত যে ওদের সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারবে না বলে।মৈথিলী ওকে বলে, “ঠিক আছে সেটা না হয় হল না, কিন্তু শনিবার আমরা ঢাকুরিয়ায় অমল কাকুর বাড়ি যাব, সেখানে তোমাদের দু’জনকেই যেতে হবে।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কে অমল কাকু?”
মৈথিলী, “অরুনিমার বাবা, আমি কিছু জানিন, তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছও।”
পরী ওর দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আর মৈথিলী ওর দিকে উৎসুক ভাবে তাকিয়ে। বড় দো’টানার মাঝে পরে যায় অভি, কিছু একটা বলে খান্ত করতে হবে মৈথিলীকে আর পরীকে পরে বোঝানো যাবে।
অভি, “ঠিক আছে, শনিবারের কথা শনিবারে দেখা যাবে।”
রাত অনেক হয়ে গেছে, সুব্রত মৈথিলীকে সঙ্গে করে বেড়িয়ে যায় অভির ঘর থেকে। পরী ওদের পেছন পেছন বেড়িয়ে যেতে থাকে। অভি দেখল পরী যে ওর কথা রাখছে না তাই পেছন থেকে পরীর কাঁধে হাত রাখে, ইশারায় বলতে চায় যে তুমি তোমার কথা রাখছ না। পরী কাঁধের ওপর থেকে ওর দিকে মিষ্টি করে তাকায়। সুব্রত আর মৈথিলী কিছুটা এগিয়ে গেল। পরী একটু দাঁড়িয়ে রইল তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের সামনে এনে ডগায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দিকে নাড়ে, অভি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন টাকে বুকের ওপরে মেখে নেয়।
ভগ্ন হৃদয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে চোখের ইশারায় বলে, “তুমি কথা দিয়েছিলে পরী।”
পরী মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় জানায়, “এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক সোনা।”
এই বলে পরী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
অভি বিছানার ওপরে শুয়ে পরে, গায়ের ওপরে লেপ টেনে নেয়। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর লাল ঠোঁট আর মিষ্টি হাসি। চোখ বন্ধ হয়ে যায় অভির।
কিছু নরম জিনিস যেন ওর কপালে ছুঁয়ে যায়। ঘুম ঘুম চোখ খুলে তাকায় অভি, চারদিকে তাকিয়ে দেখে যে ও একটা বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে বসে আছে। গাছের সবুজ পাতা রক্ত লাল ফুলের নিচে ঢেকে গেছে, পাতার জায়গায় শুধু লালা ফুল দেখা যাচ্ছে। গাছ থেকে একটা ফুল ওর কপালের ওপরে এসে পরে। ওর চারদিকে কৃষ্ণচুরার লাল ফুল ছড়িয়ে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে অভি, গাছটা একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, আর সবুজ ঘাসে ঢাকা সেই পাহাড়। সামনের দিকে চোখ যায় অভির, ঘাসে ঢাকা পাহাড় নেমে গেছে সমুদ্র তীরে।
ঘন নীল সমুদ্র অবিস্বাস ভাবে শান্ত, এসে মিশেছে পাহাড়ের পাদদেশে। মাথার ওপরের আকাশের রঙ ও ঘন নীল, এক ফোঁটা মেঘের দেখা নেই। দিগন্তের দিকে তাকায় অভি, কোথায় যে সমুদ্র শেষ হয়েছে আর কোথায় যে আকাশ শুরু হয়েছে সেটা ঠিক বোঝা যায় না।
অভি নিজের দিকে তাকায়, পরনে ওর প্রিয় ঘিয়ে রঙের তসরের পাঞ্জাবী আর ধাক্কা পাড়ের ধুতি। ওর সেই ডায়রিটা ওর বুকের ওপরে আধা খোলা অবস্থায় রাখা আর ওপর হাত সেই ডায়রির ওপরে। দিগন্ত থেকে একটা তীব্র সাদা আলো ওর দিকে ধেয়ে আসে। আলোর রস্মি সমুদ্র তীরে এসে থেমে যায়। সেই আলোর ছটা থেকে একটা ছয় ঘোড়ায় টানা একটা বাঁকা চাঁদ বেড়িয়ে আসে। ঘোড়া গুলো অধভুত সুন্দর দেখতে, সবার মাথার ওপরে একটা শিঙ। একটা সুন্দরী জলপরী ওই বাঁকা চাঁদের ওপরে বসে, ওর লম্বা ঘন কালো চুল হাওয়ায় উড়ছে। চুলের দু’গোছা কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে জলপরীর উন্নত বুক দুটি ঢেকে রেখেছে।
সেই উন্নত বক্ষের নিচে চোখ যায় অভির, সুন্দর নরম গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তাঁর নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। কোমরের নিচে পায়ের জায়গায় মাছের লেজ। কোমরের নিচে শরীরের নিম্নাগ সোনালি আর রুপলি রঙের মাছের আঁশে ঢাকা। ছয় ঘোড়া বাঁকা চাঁদ টিকে টেনে নিয়ে আঁশে অভির কাছে। জল পরীর মুখের দিকে লক্ষ্য করল অভি, এযে তাঁর প্রেমিকা পরীর মুখবয়াব। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দু’হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেয় আলিঙ্গনে আহ্বান জানায় অভিকে।
কাজল কালো চোখ দুটি বড় বড় হীরের মতন জলজল করছে। হাসিতে গালে টোল পড়েছে। চুলের এক গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে এসে পড়েছে, দেখে মনে হল যেন চাঁদ এক চিলতে মেঘের আড়ালে লুকচুরি খেলে বেড়াচ্ছে। অভি জলপরী, পরীর দিকে তাকিয়ে হাসল আর উঠে চলে গেল ওর দু’বাহুর মাঝে। অভিকে জড়িয়ে ধরল পরী, পরীর প্রেমের আলিঙ্গনে অভি হারিয়ে গেল। romantic story
পরী, “না বাবা না, তুমি না সবসময়ে খালি খালি ওই সব কথাই ভাবো। তোমার মৃগাঙ্কের কথা মনে আছে, সুব্রতদার বন্ধু, এক সময়ে ও হাথ ধুয়ে আমার পেছনে পরে ছিল জানো।”
অভি মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ জানি।”
পরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি জানলে কি করে?”
অভি, “মনে আছে বউভাতের আগের দিন রাতে তোমার ছোটো মা আর বাকিদের মধ্যে তুমুল বাকবিতন্ড লেগেছিল। সেদিন রাতে আমরা মদ খেয়েছিলাম আর মদের নেশায় মৃগাঙ্ক আমাদের ওর মনের কথা বলে ফেলেছিল।”
ওরা তাড়াতাড়ি ছ’টার মধ্যেই কাল্কা পৌঁছে যায়। কাল্কা পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে। অভি বলবিন্দার কে দুরে গাড়ি রাখতে নির্দেশ দেয়, যাতে কারুর চোখে ওর গাড়ি না পরে। বলবিন্দার ওদের স্টেসানের সামনে নামিয়ে দিয়ে স্টেসান চত্তর থেকে বেশ কিছু দুরে গাড়ি দাঁড় করায়।
গাড়ি থেকে নেমে সব থেকে আগে অভি মাকে ফোন করে জানায় যে ও কাল্কা পৌঁছে গেছে, কাল সকালের মধ্যে ও দিল্লী পৌঁছতে পারলে সকালের ফ্লাইট ধরবে না হলে দুপুরের ফ্লাইট ধরে বাড়ি ফিরবে। তারপরে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফেরার পথে ওর সাথে আর দেখা হবে না কেননা অভি সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাবে।
পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে ওরা হাঁটতে শুরু করে স্টেসানের দিকে। সারাক্ষণ পরী অভির হাত নিজের হাতের মধ্যে করে রাখে, মনে হয় যেন ছারলেই যদি পালিয়ে যায় অভি। স্টেসানের গেটে এসে অভি পরীর ব্যাগ পরীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পরীর দু’চোখ ছলছল করে ওঠে।
অভি তর্জনী দিয়ে কপালে আলতো টোকা মেরে বলে, “বোকা মেয়ে কাঁদছ কেন। তাড়াতাড়ি ভেতরে যাও আর কল্যাণীদের সাথে দেখা করে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এস। আমি ওই চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষা করব।”
শেষ বারের মতন দু’জনের আঙ্গুল এঁকে অপরকে ছুঁল। পরীর যেন পা আর চলছে না, অভি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে গেটের সামনে, যতক্ষণ না পরী ওই গেটের মধ্যে দিয়ে হারিয়ে গেল স্টেসানের ভিড়ে।
তিরিশ মিনিট যেন তিরিশটা বছর, অধির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে অভি, কখন ফিরে আসবে পরী। মনের মধ্যে এক অজানা আলোড়ন চলছে, ভেতরে কি হচ্ছে? কল্যানি ওকে কি জিজ্ঞেস করছে? পরী ওর বান্ধবীদের কে কি বলে বের হবে? আদৌ বের হতে পারবে কিনা? শেষ দেখা কি একবারের জন্য হবে না।
কিছুক্ষণ পরে অভি দেখতে পেল যে তিন জন মহিলা গেটের বাইরে হেঁটে আসছে, ভাল করে দেখে বুঝল যে ওর মধ্যে একজন পরী। অভির তৃষ্ণার্ত প্রানে যেন জল এল। আনমনে এদিক ওদিকে তাকাল পরী, একবার ওদের চারচোখ এক হল কিন্তু পরী ওর দিকে পাত্তা না দিয়ে আবার কল্যানির সাথে গল্প করতে শুরু করে দিল। ওই দেখে অভির বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেন দুমদুম করে বাজতে শুরু করে দিল। উৎকণ্ঠায় গলা শুকিয়ে এল অভির, কি হতে চলেছে এবারে? আদৌ পরী ওর সাথে দেখা করবে ত?
বেশ কিছু সময় আরও চলে গেল, অভি ওদের দিকে আর চোখে তাকিয়ে থাকে, পরী কি করছে। পরী আড় চোখে একবার অভির দিকে তাকাল, চাহনি যেন বলছে, “সোনা একটু অপেক্ষা করো।”
কল্যাণীদের সাথে গল্প করতে করতে পরী হটাত করে কল্যানিকে ওর দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাল। ওরা সবাই অভির দিকে এগিয়ে এল। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে যেন ভুত দেখেছে। পরী ওর চোখের চাহনি দেখে হাসি থামাতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসি টিকে প্রাণপণে বুকের ভেতরে চেপে দেয়। পরী ওর দিকে চোখ টিপে অবাক সুরে জিজ্ঞেস করে, “আরে অভিমন্যু যে, এখানে কি করে?”
কল্যানি আর রানী ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে যেন ওরা কোনো ভুত দেখেছে। পরীর ঠোঁটে ওর পুর নাম শুনে দাতে দাঁত চেপে নিজের হাসিটিকে সংবরণ করে। অভিকে পরী যেমন শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই রকম উত্তর দিতে হবে না হলে রানী রাগ করবেন।
অভি উত্তর দেয়, “শুক্রবার চণ্ডীগড়ে একটা ইন্টারভিউ ছিল, সেটা সেরে দেখলাম যে হাতে বেশ সময় আছে তাই সিমলা ঘুরতে চলে এলাম। এই এখন দিল্লী ফিরব তা মাঝ পথে একটু বিশ্রাম নেবার জন্য এখানে চা খাওয়া।”
তারপরে পরীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শুচিস্মিতা, তুমি এখানে কি করে?”
পরী হাসি চেপে নেয়, মনে মনে বুঝতে পারে যে যেহেতু ও ওর পুরো নাম ধরে ডেকেছে তাই অভিও ওর পুরো নাম নিয়েছে।
পরী কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু কল্যানি ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উত্তর দিল, “আমরা সিমলা কুল্লু মানালি ঘুরতে এসেছিলাম আমাদের বরের সাথে আর শুচিস্মিতা ও আমাদের সাথে এসেছিল। আজ রাতে ফিরে যাচ্ছি।”
পরী কল্যানির দিকে কৃতজ্ঞ নিয়ে তাকাল। ওখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক জন জানে যে কে কে মিথ্যে বলছে, তাও পরী আর অভি প্রাণপণে বুকের এক কোনে চেপে রাখে ফুটন্ত হাসি।
রানী অভি কে জিজ্ঞেস করল, “তুমি উলুপি ম্যাডামের ছেলে তাই না?”
মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ।”
বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যায় অভির, রানী আর কল্যানী কি করে মাকে চেনে?
“তোমরা আমার মাকে চেন?”
কল্যানি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ চিনি। আমরা ত সেই ছোটো বেলা থেকে বন্ধু, আমি আর পরী একই স্কুলে পড়েছি যেখানে উলুপি ম্যাডাম পড়ান।”
পরী দেখল যে এবারে হয়ত ওরা অভিকে প্রশ্নের জালে জড়িয়ে ধরবে, ও কল্যাণী কে চুপ করতে বলে, “কি রে তুই, ওকে কি তোরা হিটলারের মতন প্রশ্ন জালে বিদ্ধ করবি নাকি?”
তারপরে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার হাতে কি একটু সময় আছে? তুমি কি আমাদের ট্রেন ছাড়া পর্যন্ত থাকতে পারবে?”
রানী পরীকে বলে, “ও থাকতে যাবে কেন? ওর দেরি হয়ে যেতে পারে। আমাদের ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে সেই মাঝ রাত, ও কি করে অত সময় আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে? ওকে যেতে দে।”
পরী অল্প বিরক্তি হয়ে উঠল, অভির পাশে এসে দাঁড়িয়ে রানী কে বলে, “আমার ছোটো মা’র ছেলে, অনেকদিন পরে এই অচেনা জায়গায় দেখা হয়েছে। আমি যা বলব ও তাই করবে।”
রানী ওর কথা শুনে মৃদু রেগে গেল, “যা ভালো বুঝিস তাই কর, আমি ত শুধু ওর ভালোর জন্যে বলছিলাম। ওর যদি কোনও অসুবিধে না থাকে তাহলে আমার কি অসুবিধে হতে পারে?”
অভির বুঝতে দেরি হল না যে পরী রানীর কথায় আঘাত পেয়েছে, তাই কথা ঘুরিয়ে ওদের কে জিজ্ঞেস করল যে ওদের বরেরা কোথায় গেছে। কল্যাণী উত্তর দিল যে ওদের অয়েটিং রুমে ব্যাগ দেখার দায়িত্ব দিয়ে দু’জনে মিলে কোথাও আড্ডা মারতে বেড়িয়েছে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানিয়ে দিল যে, “আমাকে একা ফেলে যদি কোথাও যাও তাহলে দেখে নিও আমি কি করি।”
অভি ওর চোখের চাহনি দেখে ওর মনের ভাব বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় যে, “আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।”
কিছুক্ষণ পরে কোথা থেকে দিপঙ্কর আর রামানুজ উদয় হল। পরীকে দেখে দিপঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “কি ব্যাপার, অর্জুন বাবুর সাথে হানিমুনে কোথায় কোথায় যাওয়া হয়েছিল?”
দিপঙ্করের কোথা শুনে পরীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। কল্যানির দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী দিপঙ্করকে মৃদু ধাক্কা মেরে জানিয়ে দিল যে অভি ওখানে উপস্থিত। দিপঙ্কর অভিকে দেখে একটু অপ্রস্তুত বোধ করল। রামানুজ হাত বাড়িয়ে দিল অভির দিকে।
অভি ওদেরকে জিজ্ঞেস করল যে ওরা এই কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে চায় না কোথাও গিয়ে বসতে চায়। সবাই মাথা নেড়ে সায় দিল যে কোন রেস্টুরেনটে গিয়ে বসা যেতে পারে। সবাই রেস্তুরেন্টের দিকে হাঁটতে শুরু করে, পরী আর অভি বাকিদের পেছন পেছন হাঁটতে থাকে। পরীর মুখ গম্ভির, বুকের কাছে হাত আড় করে নিজেকে সামলে নিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে অভির পাশাপাশি চুপ করে হাঁটতে থাকে।
পরীর মনের অবস্থা দেখে অভি একটু ঘাবড়ে যায় যে আবেগের বশে পরী কিছু না উলটোপালটা করে ফেলে। বুকটা টনটন করতে শুরু করে অভির, পরী এত কাছে থেকেও কত দুরে মনে হয়। সবার সম্মুখে ওকে জড়িয়ে সান্তনা দিতে পারছেনা অভি। বড় কষ্ট হয় পরীর ব্যাথিত চেহারা দেখে।
রেস্তুরেন্টে বসে সবাই গল্প করে কে কি রকম ভাবে ঘুরল। কিছু পরে অভি কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, “আমরা যখন এত খোলা মেলা হয়ে গেছি ত একটা কোথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”
কল্যাণী ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, “হ্যাঁ।”
পরীর দিকে চোরা চাহনি তে দেখে কল্যাণীকে জিজ্ঞেস করল, “এই অর্জুন টি কে?”
ওর প্রশ্ন শুনে কল্যাণী আর রানী একটু থমকে গেল, পরীর দিকে তাকিয়ে থাকে দু’জনে মনের মধ্যে চলতে থাকে যে সঠিক উত্তর দেবে কি দেবে না। পরী হালকা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ওরা অভিমন্যু কে অর্জুনের কোথা বলতে পারে।
কল্যাণী, “সত্যি বলতে শুচিস্মিতা আমাদের কে অর্জুনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু ত জানায় নি তবে ওর মুখ থেকে যা শুনেছি তাতে মনে হল ও তোমার ইন্দ্রানি মাসির দেওর, পরীর খুঁজে পাওয়া ভালবাসার মানুষ। আমি ত এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে আমরা এত ভাল বান্ধবী তাও কেন আমাদের কাছ থেকে অর্জুনের কথা ও চেপে গেল।”
রানী পরী কে জিজ্ঞেস করল, “পরী কেই অর্জুনের কথা জিজ্ঞেস করতে দোষ কি।”
পরী অস্বাভাবিক ভাবে চুপ, বুকের মধ্যে যেন ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথা ককিয়ে উঠছে বারে বারে। খুব ধির স্বরে উত্তর দিল, “আমরা দুজনে বেশ ভালো ঘুরেছি, ব্যাস এইটুকু এখন বলতে পারি। বাকি পরে শুনে নিস তোরা।”
গল্প করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। দিপঙ্কর ঘড়ি দেখে, “আরে দশটা বাজে যে।”
ওরা রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে স্টেসানের দিকে পা বাড়ায়। পরী ওদের বলে যে ও কিছুক্ষণ আরও অভির সাথে কাটাতে চায়। কল্যাণী ওকে বাঁধা দেয় না। বাকিরা স্টেসানে ঢুকে পরে, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে পরী আর অভি।
দুজনে চুপচাপ হাইওয়ের দিকে হাঁটতে থাকে। পরীর মুখের ওপরে ছেড়ে যাওয়ার ব্যাথার ছবি। মাঝ রাস্তায় অভি ওকে দাঁড় করিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হল এত চুপ করে কেন আছো?”
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে বলে, “তুমি চলে যাও।”
অভি ওর কাঁধে হাত রেখে ওকে বুকের কাছে টেনে আনে। অভির হাতের ছোঁয়া পেয়ে পরী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলে পরী। অভি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু পরীর কান্না আর থামতে চায় না।
কান্না ভেজা গলায় অভিকে বলে, “সোনা তুমি চলে যাও, প্লিস। এই ঠাণ্ডার রাতে আমার ট্রেন ছেড়ে দেবে আর তুমি একা একা স্টেসানে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই দৃশ্য আমার সহ্য হবে না, আমি ভেঙ্গে পড়ব অভি। আমাকে শান্ত করার জন্য আমার বান্ধবীরা আমার সাথে থাকবে কিন্তু তুমি? আমি চলে যাবার পরে তুমি কি করে থাকবে? আমি তোমার বুকের ওই ব্যাথা সহ্য করতে পারব না অভি, প্লিস তুমি এখুনি চলে যাও।”
অভি ওর মাথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে, “আমার জন্য চিন্তা কোরোনা, আমি ঠিক থাকব।”
পরী, “না তুমি চলে যাও। তুমি একা একা দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত নাড়াবে সেই দেখে আমি আরও ভেঙ্গে পড়ব অভি, প্লিস চলে যাও।”
অভি, “ঠিক আছে, দেখছি কি করা যায়।”
অভি ওর চোখের জল মুছে ওকে শান্ত হয়ে অনুরধ করে। তারপরে ওরা দু’জনে স্টেসানের দিকে হাটা দেয়। স্টেসানের বাইরে এসে দেখে যে কল্যাণী আর রানী ওদের পথ চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরীর চোখের পাতা ভিজে দেখে কল্যাণী উৎসুক হয়ে অভির দিকে তাকায়। অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না, কিছুক্ষণ মাথা চুলকে উত্তর দেয় যে পরী ওর ছোটো মার কথা মনে করে মন খারাপ হয়েছে তাই চোখে জল।
কল্যাণী ওর কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারল না। অভির দিকে একভাবে চেয়ে থাকে কল্যাণী। অভি বুক দুরদুর করে ওঠে, কল্যাণী কি কিছু বুঝতে পেরে গেছে? ওরা যা ভয় পাচ্ছিল সেটা ঘটে যায়। কল্যাণী অভির দিকে তাকিয়ে বলে, “মনে হচ্ছে কিছু অঙ্ক আমি মেলাতে পারছি না।”
অভির দিকে আঙ্গুল তুলে বলে, “আজ বিকেলে তোমাকে এখানে দেখে ঠিক অঙ্ক মেলে নি আমার। তোমার চশমা, ঠিক এই চশমা ছিল অর্জুনের চোখে তাই না। খুলে যদি বলি তাহলে অর্জুন নামে কেউ নেই, তুমি ছিলে শুচিস্মিতার সাথে। কি আমি ঠিক বলছি কি না?”
ওই কথা শুনে অভির মনে হল যেন কেউ ওর মাথার ওপরে গরম লাভা ঢেলে দিয়েছে। বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা যেকোনো সময়ে ফেটে বেড়িয়ে আসবে এমন জোরে ধুকপুক করতে শুরু করে। পরী ওর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে, ওরা যে ধরা পরে গেছে। দু’চোখে বন্যা নামে, পরী ওর হাত শক্ত করে ধরে নেয়, কি হবে এবারে।
কল্যাণী পরীর মুখ দেখে সব বুঝতে পেরে যায়। পরীকে জিজ্ঞেস করে, “তোর সাথে অভিমন্যু ছিল তাই ত?”
পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ নিয়ে তাকায়। সারা চেহারায় ফুটে ওঠে কাতর আবেদন।
কল্যাণী ওর মুখ দেখে মৃদু হেসে বলে, “চিন্তা নেই তোর। একথা কেউ জানবে না, পরী।”
ওরা সবাই মিলে অয়েটিং রুমের দিকে হাতা দিল। কল্যাণীর কথা শুনে দু’জনের বুকের ওপরে এতক্ষণ যে পাথর চাপা ছিল সেটা সরে যায়। অয়েটিং রুমে বসা, দিপঙ্কর আর রামানুজ ওদের দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। রানী ওদের কে সব কথা বলে। কথা শুনে সবাই চুপ। অভির আর পরীর ধুকপুক করতে থাকে, কি হবে কি হবে।
রানী পরীর চিবুক আঙ্গুল দিয়ে নেড়ে হেসে বলে, “অরে মেয়ে চিন্তা করিস না। এই খবর আমাদের কাছে গোপনে থাকবে।”
সবাই মাথা নেড়ে সায় জানায় যে এই কথা ওরা কাউকে জানাবে না।
কল্যাণী পরীর পাশেই বসে ছিল, ওর জড়িয়ে ধরে বলল, “তুই এত চিন্তা করছিস কেন? ওকে ভালবাসিস বলে চিন্তা করছিস না তুই ওর চেয়ে বড় বলে চিন্তা করছিস। তুই সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়ে আর ও একটা বুদ্ধিমান ছেলে। তোরা একে অপরকে ভালবাসিস, এতে পাপ কোথায়? তুই ওর সম্পর্কের মাসি হস তাই ভয়? তোদের কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। ও তোর কে হয়? তোর মায়ের মামাত দিদির, সেজ মেয়ের ছেলে। তোদের সম্পর্ক অনেক অনেক দুরের, কেউ কাউকে চিন্তিস ও না।
ওটা হয়েছে কেননা উলুপি ম্যাডাম তোর বাড়ির কাছের স্কুলে পড়ান বলে তোদের পরিরবারে সাথে সম্পর্ক, তা না হলে তোরা কেউ কাউকে চিন্তস ও না।”
দিপঙ্কর অভির পিঠ চাপড়ে বলল, “ব্রাদার এত ভয় পাবার কি আছে? তুমি ত ভায়া আমার সব থেকে সুন্দরী শালি টাকে হাত করে নিলে আর তার সাথে একা একা কোন এক দুর্গম স্থানে ঘুরেও এলে। তোমার সাহসের বলিহারি।”
পরীর ওদের কে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাল, “তোদের কি করে যে ধন্যবাদ জানাব আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না রে।”
রানী ওদের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোরা দুটি শয়তান, সময় কেমন কাটালি?”
অভির দিকে চোখ মেরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আমার বান্ধবিকে বেশি ব্যাথা দাও নি ত?”
ওর কথা শুনে লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে গেল, অভির দিকে লাজুক মুখে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হেসে ফেলল পরী। পরীর পুনরায় হসি মুখ দেখে অভির মন থেকে চিন্তার পাথর সরে যায়।
কল্যাণী পরীর গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, “তোরা তাহলে বেড়াতে গিয়ে অনেক মজা করেছিস তাই না? আমি তোর চোখের হাসি দেখে বুঝতে পেরে গেছি সুতরাং আমার কাছে লুকিয়ে বিশেষ লাভ হবে না, পরী।”
চিন্তার মেঘ কেটে গেছ, ওরা সবাই আবার ঘোরার গল্পে মেতে উঠল, কে কি রকম কোথায় কোথায় ঘুরেছে তাঁর বর্ণনা করতে শুরু করে দিল। পরীর মুখে চিতকুলের বর্ণনা শুনে ওরা চারজনে অভিভুত। পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে থাকে ওর হাত। সময় খুব দ্রুত বয়ে চলে। স্টেসানের লাউডস্পিকারে ট্রেনের আগমনের ঘোষণা শুনে ওদের সময়ের কথা মনে পরে যায়।
দিপঙ্কর আর রামানুজ ট্রেনে উঠে ওদের সিটে নিজেদের ব্যাগ পত্র রাখে। পরী অভির হাত শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে প্লাটফরমের ওপরে, ওকে ছাড়তে একদম মন চাইছে না। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কবে আবার দেখা হবে পরীর সাথে, কি করে ছেড়ে যাবে পরীকে। বুকের ভেতর টনটন করে ওঠে আসন্ন বিরহ বেদনায়। কল্যাণী পরীর কাঁধে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে ট্রেনে উঠতে। পরী অভির হাত ছাড়তে চায় না।
কান্না ভেজা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি চলে যাও, তুমি আমার কথা শুনলে না। আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমি তোমাকে একা ফেলে কি করে যাব অভি। আমি তোমাকে বার বার বলেছিলাম চলে যেতে, অভি।”
কল্যাণী পরীকে জড়িয়ে ধরে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। অভি ওর মুখ আঁজলা করে নিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গালের অপরের জলের দাগ মুছিয়ে দেয়। গালে অভির হাতের পরশ পেয়ে আরও যেন ডুকরে কেঁদে ওঠে পরী।
অভি, “প্লিস ছোটো বাচ্চার মতন কাঁদে না সোনা, আমি ঠিক আছি সোনা।”
কল্যাণী অভিকে জানায় যে ও পরীকে সামলে নেবে। অভি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে, বুকের ভেতরে বিরহের সুর বেজে ওঠে। ওর ভয় করে আবার যেন পরী অজ্ঞান না হয়ে যায়।
অভি, “আমি কথা দিচ্ছি যে এই দু’মাসে তোমার সাথে কিছু করে হক আমি দেখা করব।”
কল্যাণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “দু’মাস অনেক লম্বা সময়।” মাথা নাড়ায় অভি, “হ্যাঁ কিন্তু কি করা যাবে।”
কল্যাণী পরীকে নিয়ে ট্রেনের দিকে হাটা লাগায়। কল্যাণী ট্রেনে উঠে পরে। অভি একমনে দেখতে থাকে পরীকে। এমন সময় কল্যাণীর হাত ছাড়িয়ে পরী ঘুরে দাঁড়ায়, আর দৌড়ে এসে অভির বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। অভি দুহাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পরীকে, যেন পৃথিবীর কোন শক্তি ওদের কে বিচ্ছিন্ন করেত না পারে। পরীর মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে অভি। অভির বুকের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে পরী।
ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে। পরীকে কোন মতে আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে। পরী দৌড়ে ওর বান্ধবীদের কাছে চলে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেয়, পরী ওর দিকে জল ভরা চোখ আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কল্যাণী ওকে জড়িয়ে ধরে থাকে। পরী ওর ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের কাছে এনে, তাঁর ডগায় একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে অভির দিকে ছুঁড়ে দেয়। অভি পরীর ছোড়া সেই চুমু টা লুফে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।
অভি ডান হাতের তর্জনী উঠায় ইশারা করে “আই” তারপরে বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী মেলে ধরে, ইশারা করে “এল” শেষে মধ্যমা আর অনামিকা ফাঁক করে ইশারা করে “ইউ”।
ট্রেন ঘন কালো অন্ধকারে মিলিয়ে যায় কিছুক্ষণে মধ্যেই। অভি একা দাঁড়িয়ে থাকে খালি প্লাটফরমের ওপরে, বুক টা হুহু করে ওঠে। বাকি রাস্তা ওকে একা একা ফিরতে হবে, সাথে থাকবে না পরী। পকেট থেকে রুমাল টি বের করে একবার পরীর গায়ের গন্ধ মুখে মেখে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
তৃতীয় অধ্যায়ঃ গঙ্গাবক্ষে জোয়ার ভাঁটা
জলপরীর স্বপ্ন
অভিমন্যু তালুকদারের পরিবার বেশ সচ্ছল। দমদমে ওদের বিশাল দু’তলা বাড়ি। একতলায় একটা মারয়ারি পরিবার ভাড়া থাকে। দু’তলায় তিনটে শোবার ঘর, একটি খাবার ঘর আর একটি বশার ঘর। তিন’তলায় একটি শোবার ঘর আছে। মায়ের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে, পরীর জন্য, অভিকে ওর দুতলার ঘর ছেড়ে দিতে হয়। মায়ের মেয়ের চেয়ে ভাবি বউমা বলা ভাল, যদিও অভির মনে সংশয়ের দানা বাঁধা যে মা বাবা র সম্মতি পাওয়া অনেক অনেক কষ্টকর হবে। বাবার আদেশ অমান্য করা যায় না, দু’তলায় ঘর খালি থাকলেও অভিকে তিন তলার ঘর বরাদ্দ করা হয়।
কলেজের পরীক্ষা সামনে, পরাশুনায় ডুবে যায় অভিমন্যু। রোজ রাতের বেলা পরীর কাজল কালো চোখ ওর খোলা বইয়ের পাতায় ফুটে ওঠে। গালে পরীর ঠোঁটের পরশ অনুভব করে তখন। মন যেন কেমন করে ওঠে অভির। কাল্কা তে পরী যে চুমু ছুঁড়ে দিয়েছিল তাঁর কথা অভির বারে বারে মনে পরে যায়, সেই চুমু টাকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখে অভি। পড়তে বসে পড়ার দিকে মন থাকে না। রুমাল বের করে মাঝে মাঝে ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে পরীর স্পর্শ নিতে চেষ্টা করে, মুখের ওপরে মেলে ধরে রুমাল, অনুভব করতে চেষ্টা করে পরীর হাতের মিষ্টি ছোঁয়া। গ্রামের মেয়ে লাজুক পরী, মিলনের সময়েও একবারের জন্য নিজেকে অভির চোখের সামনে উন্মুক্ত করতে পারেনি।
দিনটা ছিল বৃহস্পতি বার, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কোলকাতায় ঠাণ্ডা বেশ কমে এসেছে। আকাশে বেশ ঝলমলে রোদ উঠেছে। হাওয়ায় যেন ভালবাসা ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুলে যাবার আগে মা অভিকে জানাল যে বিয়ের পরে সুব্রত আর মৈথিলীকে নিমন্ত্রন করে খাওয়ানো হয়নি তাই আজ মা ওদের কে বাড়িতে ডেকেছে। অভির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, একবারের জন্য জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে যে পরী সাথে আসবে কিনা। কিন্তু কিন্তু করেও শেষ পর্যন্ত মাকে জিজ্ঞেস করে যে পরী সাথে আসছে কি না। মা জানালেন আসতেও পারে নাও আসতে পারে পরী। পরীর আসার ঠিক নেই শুনে অভির মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কলেজে সারাদিন মনমরা হয়ে থাকে অভির। বারেবারে পরীর চোখ বইয়ের পাতার ওপরে ভেসে ওঠে।
রাতে ফিসিক্স পেপারের কোচিং ক্লাস ছিল তাই অভির বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়। মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরে কলিং বেল বাজায় অভি। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে মা বারন্দা থেকে দেখলেন যে কে এসেছে।
দরজা খুলল কেউ, সামনে পরীকে দেখে হাঁ হয়ে গেল অভি। বাঁ পা চউকাঠের ভেতরে কিন্তু তারপরে আর পা ওঠে না অভির।
অভির বিস্ময়ান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে পরী। চিবুকে আঙ্গুল দিয়ে ওর খোলা মুখ বন্ধ করে দিল, হেসে বলল, “মাছি ঢুকে যাবে যে!”
অভি হাঁ করে তাকিয়ে পরীর রুপ দেখে। অনেক দিন পরে পরীকে যে নতুন করে দেখছে অভি। ফর্সা কপালে, দুই বাঁকা ভুরুর মাঝে নীল রঙের টিপ। লম্বা ঘন কালো চুল খোলা, বাঁ কাঁধের ওপরে থেকে সামনের দিকে নেমে এসেছে। চুলের কিছু অংশ মুখখানি কিছুটা ঢেকে রেখেছে যেন চাঁদ লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। পরনে আঁটো গাড় নীল রঙের কামিজ, বুকের নিচ থেকে ফুলে উঠে একদম হাঁটু পর্যন্ত নেমে গেছে ঘাগরার মতন। হাসিতে গালে টোল পড়েছে আর অভির ওই হাসি দেখে মনে হল যেন এখুনি পরীকে জড়িয়ে ধরে ওর লাল লাল গালে চুমু খায়।
পরী ওর মুখ বন্ধ করে চোখের পাতার ওপরে আঙ্গুল রেখে বলে, “আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থেকো না, আমার ভেতর টা কেমন করে উঠছে, অভি।”
অভি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরতে যায়। পরী ওকে আলতো ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে, “কি করছ? বাড়িতে সবাই আছে যে। দেরি দেখলে এখুনি ছোটো মা ডাক দেবে।”
চালে মত্ত ছন্দ এনে অভির কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় পরী। অভি কিছুক্ষণ ওকে পেছন থেকে দেখে, তারপরে আবার হাত বাড়িয়ে ধরতে চেষ্টা করে। পরী দৌড়ে ওর হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বার বার পেছনে তাকিয়ে হাসে আর দুচোখ যেন ওকে হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে, “ধরতে পারলে আমি তোমার।”
বসার ঘরে ঢুকে অভি দেখল যে বাবা মা সুব্রত মৈথিলী বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।
সুব্রত ওকে দেখে বলে উঠল, “কি মামা কেমন আছো?”
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় অভি। মৈথিলীর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “মামা আমি ভাল, তোমার খবর বল?”
নতুন বউ মৈথিলী কে দেখতে ভারী সুন্দর লাগছে, পরনে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি। এই বার বেশ কাছ থেকে দেখছে মৈথিলীকে, বিয়ের সময়ে তো ঠিক করে দেখে ওঠা হয়নি নতুন বউকে। গায়ের রঙ পরীর মতন অত ফর্সা না হলেও ফর্সা বলা চলে মৈথিলীকে। বেশ খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অভি। সুব্রত ওর কাঁধ চাপড়ে ওর কলেজের খবরাখবর জিজ্ঞেস করে। অভি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় যে সব ঠিক চলছে।
মা জানালেন যে ওদের আনতে গিয়ে পরী ও বায়না ধরে যে আসবে তাই মা ওকেও সাথে নিয়ে আসে। মায়ের কথা শুনে পরী চোরা চাহনিতে অভির দিকে তাকায়, “দেখলে ত আমার বুদ্ধি।”
সামনে পরী মায়ের সাথে বসে। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে আদর খাচ্ছে। পরীর মুখে অনাবিল আনন্দ, যেন অনেক দিন পরে ও হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজে পেয়েছে।
মা ওদেরকে শোনাতে লাগ্লেন যে পরীর ঘর টাকে মা কি রকম করে সাজিয়েছেন। সব ঘরের জন্য নতুন পর্দা কেনা হয়েছে, পরীর যে রঙ ভালো লাগে সেই রঙের বিছানার চাদর কেনা হয়েছে। এমনকি ঘরের দেয়ালের রঙ পর্যন্ত পরীর পছন্দের রঙ্গে রঙ করেছে মা। অভির সেই কথা ঠিক সহ্য হল না, মায়ের যেন সব কিছু বাড়িয়ে বলার স্বভাব। অভি পরীর দিকে তাকিয়ে দেখল, ধিরে ধিরে পরী জানতে পারবে ওর ছোটো মা কি রকম মানুষ। অভি মাথা ব্যাথার ছল করে অখান থেকে উঠে, তিন তলায় নিজের ঘরে চলে এল।
মায়ের সবকিছু যেন বারাবারি করে বলার স্বভাব। নিজে কি করেছে না করেছে যেন সবাইকে ঢাক পিটিয়ে না বললে শান্তি হয় না মায়ের। অভির প্রতি ভালবাসা বাঁ স্নেহ যেন মা সবসময়ে পয়সা দিয়ে মাপে। মাঝে মাঝেই শোনাতে ছারে না যে যেহেতু বাবা মা ওর পড়াশুনার জন্য অনেক পয়সা খরচ করেছে সুতরাং ওকে ভাল রেসাল্ট করতেই হবে। জয়েন্ট পায়নি বলে ওর মুন্ডুপাত করতে ছারেনি মা। এই সব ভাবতে ভাবতে চুপ করে টেবিলের পাশে বসে থাকে অভি। এমন সময়ে দরজায় কেউ টোকা মারে।
অভি ভাবে পরী হয়ত দেখা করতে এসেছে, কিন্তু ঘুরে দেখে যে দরজায় সুব্রত দাঁড়িয়ে। সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি মামা কি ব্যাপার? সব কিছু ঠিক ত।”
অভি ওর দিকে হেসে উত্তর দেয়, “মামা সব ঠিক।”
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, “আজ রাতে পারটি করা যাবে কি?”
অভি উত্তর দিল, “হ্যাঁ মামা, করা যাবে। কিন্তু তুমি কি এনেছ না আমাকে নিয়ে আসতে হবে?”
সুব্রত, “না মামা আমি আনিনি, তোমাকে যোগাড় করতে হবে।”
অভি, “ঠিক আছে যোগাড় হয়ে যাবে চিন্তা কোর না।”
সুব্রত, “উলুপিদি জানতে পারবে না ত? জানতে পারলে…”
অভি ওকে আসস্থ করে, “না মামা জানতে পারবে না। রাতের বেলা কেউ উপরে আসে না। আমরা চাইলে সারা রাত ধরে গল্প করতে পারি। এই টুকু স্বাধীনতা মা আমাকে দিয়েছে যে আমার ঘরে কন বন্ধু এলে মা আমার ঘরে আসেন না। আর যাই হক, সকালে কলেজে যাবার সময়ে আমি সব বোতল নিয়ে বাইরে ফেলে দেব।”
অভি মাকে বলল যে ও আর সুব্রত একটু বাইরে যাচ্ছে। মৈথিলী আর পরী ওদের দু’জনার দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল।
মৈথিলী সুব্রতর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাওয়া হচ্ছে? যেখানেই যাচ্ছ বেশি দেরি করবে না, খাওয়ার আগেই চলে আসবে।”
সুব্রতর হয়ে অভি উত্তর দিল, “চিন্তা করও না আমি তোমার বর কে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না। আমরা খাওয়ার আগেই ফিরে আসব।”
পরী মৈথিলী কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অভির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি জানি তোমরা কোথায় যাচ্ছ।”
অভি বুঝতে পারল যে পরী বুঝে গেছে তাই চুপ করার জন্য ওকে ধমকের সুরে বলল, “ঠিক আছে হয়েছে, এবারে ভেতরে যাও তুমি।”
অ্যালকোহল কিনতে বেড়িয়ে গেল ওরা। বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকানে পেয়ে যেতে পারে না পেলে খান্না না হয় দমদম স্টেসানের কাছে যেতে হবে।
সুব্রত ওকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা মামা তুমি অরুনিমার ওপরে কি জাদু করেছ? বারবার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।”
অভি মাথা চুলকায়, অরুনিমা কে অরুনিমা? তারপরে মনে পরে, হ্যাঁ সুব্রতর শ্যালিকা অরুনিমা, দক্ষিণ কোলকাতায় থাকে, বউভাতের দিন দেখা হয়েছিল।
সুব্রত ওর মুখ দেখে বলে, “কি মামা, অরুনিমাকে ভুলে গেলে? আমার সেই সুন্দরী শ্যালিকা, বউভাতের দিনে দেখা হয়েছিল তোমার সাথে।”
অভি, “হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, অরুনিমার কথা।”
সুব্রত, “কি মামা, তুমি আমার অমন সাধের শালিকাকে ভুলে গেলে। ও তোমার কথা কত জিজ্ঞেস করেছিল।”
অভির অসব কথা ঠিক পছন্দ হয় না, তাই কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “মামা তুমি বল তোমার হানিমুন কেমন গেল। হানিমুনে গিয়ে চুরনির সাথে কি কি খেলা করলে।”
সুব্রত, “মামা গোয়া দারুন জায়গা। শীতকালে ত আরও সুন্দর মামা। অইসব রোদে ঢাকা বিচ আর তাঁর ওপরে বিকিনি পরা মেয়েছেলেরা। মামা কি যে বলব, চোখের যে কি সুখ, বলে বুঝাতে পারব না।”
অভি, “ত তুমি বউকে ছেড়ে ওই বিকিনি পরা মেয়েদের দেখছিলে?”
সুব্রত, “মামা, বিউটি দেখা ভাল, টাচ না করলেই হল।”
অভি, “তাঁর মানে কি চুরনি সুন্দরী নয়?”
সুব্রত, “না না না আমার মানে সেটা নয়…”
সুব্রত শুরু করল ওদের হানিমুনের গল্প। দমদম থেকে ওরা অ্যালকোহল কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে ফেরা শুরু করল। ফেরার পথে আবার সুব্রতর মুখে অরুনিমার কথা।
সুব্রত, “অরুনিমা আমাকে বলেছিল যে ও নাকি তোমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়েছে আর তুমি নাকি এক বারও ফোন করনি?”
অভি, “মামা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওর কথা ত আমি কি করে ওকে ফোন করব। যাই হক ও অত বার করে আমার কথা কেন জিজ্ঞেস করছিল?”
সুব্রত, “আরে মামা, না জানার ভান কোরনা একদম। তুমি ওকে কি জল খাইয়েছ সেটা তুমি জানো।”
অভি ওকে মজা করে বলল, “মামা আর একবার অরুনিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দাও তারপরে দ্যাখ তোমার শালির অবস্থা কি করি।”
সুব্রত জোরে হেসে ফেলল, “মামা অরুনিমা তোমার সাথে দেখা করার জন্য পাগল। আমি তোমার ফোন নাম্বার ওকে দেইনি এই ভেবে যে তুমি কি ভাববে তাই। যাই হক আমি তোমার কথা অরুনিমার কাছে পৌঁছে দেব।”
বাড়ি ফিরে দেখল, যে খাবার তৈরি। মা জানালেন যে পরী মায়ের সাথে শোবে। পরীর ঘরে সুব্রত আর মৈথিলী বাবার জায়গা গেস্ট রুমে। খাবার পরে সুব্রত আর অভি তিন তলায় অভির ঘরে চলে যায়, ড্রিঙ্ক পার্টি শুরু করার জন্য।
অভি আর সুব্রত মুখমুখি বিছানার ওপরে বসে। অভি বিছানার ওপরে খবরের কাগজ পেতে দেয় তার ওপরে বোতল আর গ্লাস রাখে। সুব্রত প্রথম পানের গ্লাস তৈরি করে অভির হাতে ধরিয়ে দেয়।
অভি, “চিয়ারস ফর হানিমুন মামা।”
সুব্রতর কিছুক্ষণ পরেই নেশা চরে যায়, “কি জায়গা মামা, কি যে বলব।”
অভি, “তুমি মামা শুধু বিচ আর বিউটি দেখেছ? তোমার চুরনির বিউটি দেখনি?”
সুব্রত, “চুরনি চুরনি চুরনি… আমার স্বপ্নের সেক্সি বউ।”
অভি, “আমি জানি তোমার সেক্সি বউ, তারপর কি হল?”
সুব্রত, “মামা হানিমুনে তুমিও গোয়া যেও।”
অভি মনে মনে বলে, “আমার সমুদ্র সৈকত পছন্দ করে না, পাহাড় পছন্দ করে। হানিমুন ত আমরা পাহারে কাটিয়ে এসেছি।” অভি ওকে বলে, “না মামা, আমার পাহাড় পছন্দ, আমি আমার বউকে নিয়ে হানিমুনে পাহাড়েই যাবো।”
গল্প চলতে থাকে, রাত এগারটা বেজে যায় গল্প করতে করতে। কলকাতার ফেব্রুয়ারি মাসের শীত বড় মিষ্টি। কিন্তু আজ মদের নেশায় আর মৈথিলীর রুপ যেন ওর শরীর গরম করে দিয়েছে। গ্লাসের শেষ পানীয় টুকু গলায় ঢেলে দেয় অভি। চোখের সামনে এক কমনীয় নারী মূর্তি ভেসে ওঠে, কে ও পরী না মৈথিলী?
সুব্রত আর অভি দুজনের নেশা আজ ঠিক ঠাক, নিজেদের আয়ত্তে আছে এখন, বউভাতের আগের দিনের রাতের মতন চুরান্ত অবস্থায় এখন পৌঁছায়নি ওরা। কিছুক্ষণ পরে দুজনেই চুপ, যেন আর কিছু বলার নেই। এক এক চুমুক গ্লাসে দিতে দিতে এঁকে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে লাল লাল চোখে।
ঠিক সেই সময়ে দরজায় আওয়াজ হয়। মৈথিলী দরজার পাল্লা ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে, পেছন পেছন পরী।
মৈথিলী বোতল আর গ্লাস দেখে আঁতকে ওঠে, “কি হচ্ছে এ সব। আমি ত ভাবছিলাম যে তোমারা এমনি গল্প গুজব করছ, ঘুণাক্ষরে ও ভাবতে পারিনি যে তোমরা দারুর বোতল নিয়ে বসবে, সেই রাতের কথা মনে নেই তোমাদের?”
নেশায় ঢুলু ঢুলু অভির চোখের সামনে দুই সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে। মৈথিলীর পরনে একটা হালকা বেগুনি রঙের টু’পিস নাইটড্রেস। কোমরের কাছে বেল্ট দিয়ে বাঁধা থাকার দরুন উন্নত বুখ দুটি যেন ফুলে উঠেছে। ভেতরের নাইটড্রেস টা মনে হয় হাতকাটা এবং ছোটো। মাঝে মাঝে অপরের অংশের ফ্লাপ খুলে যাওয়ার দরুন মসৃণ পা বেড়িয়ে পড়ছে। মাথার চুল খোলা, চোখে যেন আগুন। কটমট করে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে আছে। পরী ওর পেছনে দাঁড়িয়ে পরনে সাদা রঙের পাতলা একটা নাইট ড্রেস। পরীর পেলব শরীরের সাথে লেপটে রয়েছে গায়ের কাপড়। পরী পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে মৈথিলীর কোমর আর ওর কাঁধের ওপরে থুতনি রেখে মিটিমিটি করে অভির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
অভির নেশার চোখে ঠাহর করতে পারছে না যে এই রাতে কাকে বেশি সুন্দরী দেখাচ্ছে, পরী না মৈথিলী। পরী মত্ত চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দেয় আর জিব দিয়ে অপরের ঠোঁট চেটে নেয়। অভির হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে পরীর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। সুব্রত মৈথিলীর দিকে ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সুযোগ পেলে যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে মৈথিলীর ওপরে আর কুটিকুটি করে ছিঁড়ে খাবে ওর কমনীয়তা। পরী যেহেতু মৈথিলীর বুকের নিচে হাত দিয়ে থাকে তাই মৈথিলীর বুক দুটি অস্বাভাবিক রুপে সামনের দিকে ঠেলে ওঠে। সুব্রত আর অভির দু’জনের সেই উন্নত বক্ষ দেখে শিরায় শিরায় উত্তেজনার আগুন ছড়িয়ে পরে।
অভি ওদের রুপ লাবন্য দেখে আর থাকতে পারে না। পরীর হাসি যেন ওর বুকের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। এত কাছে থাকা সত্তেও পরীকে জড়িয়ে ধরতে পারছেনা অভি, ওর ওই লাল লাল গালে চুমু খেতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত অভি ওদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাত মৈথিলীর দিকে ছড়িয়ে দিয়ে, দু’চোখ পরীর চোখের ওপরে নিবদ্ধ করে গান গেয়ে ওঠে,
“এয়সে না মুঝে তুম দেখো…সিনে সে লগা লুঙ্গা…তুমকো মেয় চুরা লুঙ্গা তুমসে…দিল মে ছুপা লুঙ্গা…”
ওর গান শুনে মৈথিলী একটু থমকে যায়। দুজনেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে। পরী বুঝতে পারে যে গান টা অভি ওর জন্য গেয়েছে, কিন্তু লজ্জায় মৈথিলী নিজের মুখ দুহাতে ঢেকে নেয়। সুব্রত লাফিয়ে নেমে পরে বিছানা থেকে আর অভির কান ধরে উঠিয়ে দেয়।
সুব্রত, “আবে কুত্তা, আমার বউকে লাইন মারা হচ্ছে?”
অভি মনে মনে বলে, “মামা আমি তোমার বউকে কেন লাইন মারতে যাব। আমার বউ যে তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে, আমি গান ত আমার বউয়ের জন্য গেয়েছি।”
কিন্তু সুব্রতর সাথে মজা করার জন্য বলে, “মামা চুরনি কে দেখে আর থাকতে পারলাম না মামা, আচমকা গান টা বুক থেকে বেড়িয়ে গেল।”
সবাই হেসে ওঠে ওর কথায়। তারপরে সবাই বসে পরে বিছানার ওপরে। মৈথিলী সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে আর সুব্রত মৈথিলীকে জড়িয়ে ধরে থাকে। জড়াজড়ি করার ফলে মৈথিলীর পরনের কাপড় হাটুর ওপরে উঠে আসে আর মসৃণ বাঁকা পায়ের গুচ্ছ নেশাগ্রস্ত অভির চোখের বেড়িয়ে পরে। সেই দৃশ্য দেখে অভির গালার কাছে উত্তেজনা দলা পাকিয়ে যায়। সুব্রতর আদরের চটে মৈথিলীর চোখ কিঞ্চিত বন্ধ হয়ে আসে। পরী আর অভি জানে যে ওদের সামনে ওরা প্রেমিক প্রেমিকা নয় তাই ওরা দুজনে একটু দুরে দুরে বসে।
পরীর মনে অভির মুখ দেখে বড় কষ্ট হয়, এত কাছে থাকা সত্তেও ও ওর কোলে মাথা রেখে শুতে পারছে না। হৃদয়ের ভেতর টা যেন কেঁদে ওঠে পরীর। শুধু দুজন দুজনার দিকে চোরা চাহনিতে প্রেম নিবেদন ছাড়া আর কিছু করতে পারে না।
মৈথিলী অভিকে বলে, “অভিমন্যু তুমি আমার বরকে মাতাল বানিয়ে ছাড়লে।”
অভি, “আরে চুরনি, আমার সাথে দেখা হওয়ার আগে থেকে তোমার বর ড্রিঙ্ক করে।”
মৈথিলী ওর কথা শুনে সুব্রতর দিকে কটমট করে তাকায়, এই যেন খেয়ে ফেলবে। সুব্রত বিব্রত বোধ করে, মৈথিলীকে শান্ত করার জন্য বলে, “না গো, আমি একদম ড্রিঙ্ক করি না, এই শুধু বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান হলে করে ফেলি।”
মৈথিলী, “আজ বিশেষ কোন অনুষ্ঠান আছে শুনি?”
সুব্রত, “বাঃ রে, আজকে ত বেশ বড় দিন। উলুপিদি আমাদের নেমন্তন্ন করেছে, অভিমন্যুর সাথে দেখা হল, আমাদের হানিমুন ভাল কেটেছে… আরও কত কিছু আছে বেবি।”
অভি, “পিনেঅয়ালে কো পিনে কা বাহানা চাহিয়ে, মাতালের শুধু মাত্র একটা ফাঁক দরকার, চুরনি।”
পরী আর মৈথিলী দুজনেই অভির কথা শুনে হেসে ফেলল। মৈথিলী সুব্রতকে বলল, “আর গলায় না ঢেলে আমার সাথে শুতে এসো তাড়াতাড়ি।”
মৈথিলীর দিকে দেখল অভি, মৈথিলী একটু বিরক্তি ভরা চোখে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে।
অভি ওকে খ্যাপানর জন্য বলল, “রাতের জন্য তর সইছেনা চুরনি? রাতে শোবে না জেগে কাটাবে?”
ওর কথা শুনে মৈথিলীর মুখ আবার লজ্জায় লালা হয়ে ওঠে। পরী বিরক্ত হয়ে অভিকে বকে, “তুমি চুপ করবে না হলে আমি কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলব।”
অভি পরীর দিকে ফিরে মাথা নুইয়ে ইশারায় জানায়, “তোমার হাতে মরার জন্য আমি কবে থেকে তৈরি।”
সুব্রত মৈথিলীকে অনুনয় করে, “প্লিস প্লিস প্লিস, আর একটা গ্লাস, ব্যাস তারপরে আমি তোমার বাহুতে।”
পরী অভিমান করে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমরা গিলবে ওই সব আর আমরা কি আঙ্গুল চুষব?”
সুব্রত, “আরে না না, তোরা কোক খেতে পারিস।”
কোকের বতলের দিকে তাকিয়ে দেখল যে বোতল খালি। পরী খালি বোতল টা ওদের নাকের সামনে নাড়িয়ে বলল, “আমরা কি খালি জল খাব? তা হবে না।”
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, “মামা কি করা যায়, এই রাতে এদের জন্য কিছু যোগাড় করতে হবে যে না হলে আমি ত রাতে শুতে পারব না মামা।”
অভি আবার গেয়ে উঠল,
“কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা…কভি নেহি পর শকতা মেয়খানে মে তালা…এক দো চার নেহি সারা শহর হ্যায় পিনে ওয়ালা…”
কবিতা শুনে সুব্রত বলে উঠল, “অয়াহ অয়াহ… কেয়া বাত হ্যায়, তাহলে যাও মামা এক লিটার কোক নিয়ে এস।”
রাত সাড়ে বারটা বাজে, অভি একবার ঘড়ি দেখল একবার পরী কে দেখল। তারপরে দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়ে বাস স্টান্ডের কাছে একটা দোকান থেকে এক বোতল কোক কিনে আনল।
হাপাতে হাপাতে সিঁড়ি চরে ছাদে উঠে লক্ষ্য করে যে পরী খালি ছাদের দাঁড়িয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে একমনে তারা দেখছে। আকাশে বাঁকা চাঁদ, মেঘের আড়ালে মাঝে মাঝে লুকোচুরি খেলছে।
পরীর হাত বুকের কাছে ভাঁজ করা। সেই অন্ধকার রাতের মৃদু আলোতে পরীকে যেন স্বর্গের অপ্সরার মতন দেখাচ্ছে। পরনের পাতলা কাপড় ওর ত্বকের সাথে লেপ্টে রয়েছে, কাঁধ অনাবৃত। হাত আর কাঁধের মসৃণ ত্বকের ওপরে রাতের মৃদু আলো পিছলে যাচ্ছে যেন। চওরা পিঠের পরে পরীর পাতলা কোমরের দিকে অভির ক্ষুধার্ত চোখ গেল। ঠিক পাতলা কোমরের নিচে ফুলে উঠেছে কোমল নিতম্ব। পরনের কাপড় এত পাতলা যে পরীর শরীরের প্রতিটি বাঁক ফুটে উঠে ওর ক্ষুধার্ত চোখের সামনে উন্মুক্ত।
মাথার চুল খোলা, হাওয়ায় উড়ে মাঝে মাঝে ওর সুন্দর মুখের ওপরে চলে আসছে। পরীর কোমল শরীর দেখে অভির মাথার মধ্যে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। বুকের মাঝে প্রবল ইচ্ছে জাগে যে এখুনি ওকে বাহুপাসে নিয়ে মত্ত খেলায় রত হয় অভি।
পা টিপে টিপে পরীর পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় অভি। হৃদয় ওকে সাবধান করে, “কি করতে চলেছ অভি, সময় ঠিক নয়।”
পরী রাতের আকাশ দেখতে এত বিভোর ছিল যে টের পায় না যে অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে। অভির মাথা ওকে থামতে বারন করে, বলে, “কি বোকা তুমি। তোমার প্রেমিকা একা একা দাঁড়িয়ে তোমার সামনে আর তুমি বোকার মতন চেয়ে দেখছ? যাও জড়িয়ে ধর।”
অভি ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ নামিয়ে গোল কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। আচমকা কারুর ঠোঁটের পরসে পরী চমকে ওঠে, তারপরে পেছনে মাথা হেলিয়ে অভি কে জিজ্ঞেস করে, “কখন এলে?”
অভি ওর পেটের ওপরে হাত রাখে, আর আলতো করে পেটের নরম মাংসে চাপ দেয়। ধিরে ধিরে অভির হাত পেটের নিচে নামতে শুরু করে। তলপেটের ঠিক নিচে আর জানুসন্ধির ঠিক ওপরে বাঁ হাত রাখে অভি। ডান হাত পরীর বুকের মাঝখান থেকে নিয়ে গলা ধরে পেছন দিকে চেপে নেয় যাতে ওর গাল অভির গালে লাগে। পরী ওর উত্তপ্ত বাহুপাশে বদ্ধ হয়ে প্রেমের আবেগে কেঁপে ওঠে। romantic story
অভি মৃদুকনে ওর কানে কানে বলে, “অনেকক্ষণ আগে সোনা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমাকে দেখছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে সাম্লাতে পারলাম না, সোনা।”
পরী মৃদু শীৎকার করে ওঠে, “ম্মম্মম্মম… কি করছ কি? সুব্রতদা আর মৈথিলী তোমার রুমে আছে।”
ধরা পরে যেতে পারে এই ভয়টা যেন অভিকে আরও পাগল করে তোলে। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরীকে আর কানের লতিতে চুমু খেতে শুরু করে। ধিরে ধিরে ওর নরম গালে গাল ঘষতে থাকে অভি, ত্বকের ঘর্ষণের ফলে দু’জনের শরীর থেকে আগুনের ফুল্কি বের হয়ে শুরু করে দেয়। অভির শয়তান হাত পরীর পুরুষ্টু নিতম্বের ওপরে খেলা করতে শুরু করে। কাপড়ের ওপর থেকে ছুঁয়ে বুঝতে পারে যে পরীর নাইটড্রেসের নিচে কিছুই পরেনি। সেটা ভেবেই অভির মাথার মধ্যে বাসনার রক্ত টগবগ করে ফুটে ওঠে।
হাতের মধ্যে পিষে ফেলে একটা নিতম্ব বলয়। পরী থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নেয়, হাত পেছনে নিয়ে অভির চুলে মুঠি করে ধরে। অভি ওর নিতম্বের খাজের মধ্যে নিজের কঠিন সিংহ টিকে চেপে ধরে। পরী উত্তপ্ত সিংহের স্পর্শে কেঁপে ওঠে বারংবার।
অভি পরীর কানে কানে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলত, তুমি আমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে, তাই না?”
পরী প্রেমঘন মৃদুকনে উত্তর দেয়, “অভি আমার সারা শরীর কিছু হচ্ছে, অভি আমাকে ছেড়ে দাও প্লিস। ওরা যদি বেড়িয়ে আসে তাহলে আমরা খুব বিপদে পরে যাব।”
অভি, “তাহলে একা একা এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?”
পরী, “তুমি চলে গেলে, আমার খুব একা লাগছিল। ওরা দুজনে প্রেম শুরু করে দিল তাই ওদের ছেড়ে দিয়ে আমি বাইরে চলে এলাম।”
অভি, পরীর বুকের কাছে হাত রেখে আলতো চেপে জিজ্ঞেস করে, “চাঁদের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিলে তুমি?”
পরী, “সেই প্রথম চুম্বনের কথা মনে পরে গেছিল আমার। এখন আমার কপালে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে।”
অভির বাঁ হাত, তলপেটের নিচে নেমে যায়, জানুসন্ধির মাঝে নিয়ে যায় আঙ্গুল। চেপে ধরতে চেষ্টা করে পরীর নারীত্বের দ্বার। পরী বুঝতে পারে অভির বদ মতলব, ঠিক সময়ে হাত চেপে উঠিয়ে নিয়ে আসে পেতের ওপরে।
সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে পরী, “শয়তান ছেলে, প্লিস কোরো না ওই রকম।”
অভি ছাড়তে চায়না পরীকে আর পরী কাকুতি মিনতি করে অভির কাছে, “প্লিস ছেড়ে দাও সোনা, মৈথিলী চলে আসবে… ম্মম্মম্মম… আহ… কি করছ কি… ছাড় না প্লিস…”
অভি কাকুতি করে, “একটা ছোটো চুমু দিলে আমি ছেড়ে দেব।”
পরী, “এখন না প্লিস, কিন্তু কথা দিচ্ছি যে তোমার স্বপ্ন পূরণ করব।”
অভির হাত পরীর উন্নত বুকের ওপরে উঠে আসে, আলতো করে আঙ্গুল বুলিয়ে দেয় পরীর নরম বুকের ওপরে।
পরী আবার ফোঁস করে ওঠে, “তুমি শুনবে না তাই না। কেউ যদি বাইরে এসে আমাদের এই রকম অবস্থায় দেখে ফেলে না তখন জানবে কি বিপদ হবে।”
অভি, “আমি তোমাকে ছেড়ে দেব, কিন্তু কথা দাও যে আমার গুডনাইট কিস খুব মিষ্টি হবে।”
পরী, “কথা দিচ্ছি অভি… এবারে ছাড়ো।”
পরী কোনোরকমে অভির উত্তপ্ত আলিঙ্গন থেকে অনিচ্ছা সত্তেও নিজেকে মুক্ত করে চুল আর কাপড় ঠিক করে নেয়। অভির দিকে তাকায় দুষ্টুমি ভরা হাসি নিয়ে। অভি নিজেকে সামলে নেয়। পরী বন্ধ দরজায় আলতো টোকা মারে আর গোল খাকরে জানান দেয় যে ওরা উপস্থিত।
পরী, “আমরা আসতে পারি কি?” romantic story
সুব্রত, “আরে এস এস, অভি এত তাড়াতাড়ি চলে এল যে?”
সুব্রতর কাঁপাকাঁপা গলার আওয়াজ শুনে ওদের বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হল না যে সুব্রত আর মৈথিলী বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল আদরের খেলায়। ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখে যে, মৈথিলী সেই সুব্রতর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আর টুপিস নাইটড্রেসের অপরের অংশ টি মাটিতে লুটিয়ে। গায়ে ভেতরের পাতলা নুডল স্ট্রাপ স্লিপ হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে কোনোরকমে। মৈথিলীর শরীরের কমনীয় বাঁকের সাথে এমন ভাবে লেপ্টে আছে গায়ের কাপড় যেন দেখে মনে হচ্ছে যে কিছুই পরেনি মৈথিলী, ত্বকের ওপরে যেন হালকা বেগুনি রঙ করা।
অভির দৃষ্টি চলে যায় উন্নত বুকের ওপরে। ঊর্ধ্বাংশ অনেকটা অনাবৃত, দু’বুকের মাঝের বিভাজন অনেকটা দেখা যাচ্ছে, দৃষ্টি নেমে গোল পেটের ওপরে, সুগভীর নাভির অবয়াব বেশ ভালো ভাবে ফুটে উঠেছে পাতলা স্লিপের ভেতর থেকে। সরু কোমরের পরে ফুলে উঠেছে পুরুষ্টু নিতম্ব, আর তারপরে পেলব জানুদ্বয়। স্লিপ টা এতই পাতলা যে অভির বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা যে মৈথিলী ওই স্লিপের ভেতরে কিছুই পরেনি।
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করল, “কোক পেয়েছ?”
অভি মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ মামা কোক পেয়েছি, এখন কি?”
অভি একবার মৈথিলীর মুখের দিকে তাকাল আর একবার সুব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “গল্প করতে চাও না শুতে যেতে চাও?”
মৈথিলী নিচু গলায় উত্তর দেয়, “একটু কোক খেলে ভাল হত।”
অভি পরী আর মৈথিলীকে দু গ্লাসে কোক ঢেলে দিল। সুব্রতকে জিজ্ঞেস করল, “মামা আরও এক পেগ হয়ে যাবে নাকি?”
সুব্রত, “মামা খুব বলছ, আমার ত একটা চাই ই চাই।”
মৈথিলীর দিকে তাকিয়ে শয়তানি হেসে অভি বলে, “আজ রাতে তোমার কপালে ভীষণ দুঃখ আছে চুরনি।”
সুব্রত কে জিজ্ঞেস করে, “ঠিকঠাক আছো ত নাকি?”
সুব্রত মৈথিলীর নরম পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মামা একদম ঠিক,ব্যাস শোয়ার আগে এক পেগ মারব।”
অভি, “জো হুকুম জাহাপনা।”
এই বলে গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করে অভি। একটা গ্লাস ধরিয়ে দেয় সুব্রতকে, নিজে ছোটো ছোটো চুমুক দেয় গ্লাসে।
সুব্রত, “হ্যাঁ তা আমাদের গল্প কোথায় থেমে ছিল।”
অভি, “সেটা ঠিক মনে নেই আমার।”
সুব্রত, “অহ হ্যাঁ, আমাদের হানিমুনের কথা। তুমি মামা গোয়া যেও কিন্তু।”
পরী ওর কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু বুদ্ধিমতী মেয়ের মতন নিজের লজ্জা টাকে আড়াল করে লাজুক দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকায়। অভি ওর গালের লালিমা দেখে বুঝতে পারে যে পরীর মনে সেই পুরান চিতকুলের ছবি ভেসে উঠেছে আর হৃদয় সিক্ত হয়ে উঠেছে। অভি দেখল যে সুব্রত একবার হানিমুনের কথা শুরু করলে থামতে চাইবে না আর পরী আরও লজ্জা পাবে। কিন্তু শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল অভির মাথায়, একটু মৈথিলী কে নিয়ে মজা করার জন্য।
অভি, “হ্যাঁ মামা গোয়া কেন, অন্য জায়গা কেন নয়?”
সুব্রত, “আরে মামা গোয়ায় সুন্দর সুন্দর রোদে ঢাকা বিচ, বিশাল নীল সমুদ্র। সমুদ্র তীরে লম্বা লম্বা নারকেল গাছ, অপরূপ সুন্দর মামা, গোয়ার সমুদ্র সৈকত।”
অভি, “আর কি আছে?”
মৈথিলী সুব্রতর দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকায়, সুব্রতর নেশা যেন একটু চরে গেছে বউয়ের গালের ছোঁয়ায়, “মামা আর কি বলব, বিকিনি পরা সব মেয়ে, সমুদ্রে স্নান করছে, সেই দৃশ্য আর কি ভোলা যায় মামা… উফফফ…”
মৈথিলী লজ্জা পেয়ে সুব্রতর জানুতে থাপ্পর মেরে বলে, “তুমি কি ফরেনার দের দেখছিলে?”
সুব্রত, “সত্যি বলছি মামা, ফরেনার দের যা গঠন ভারতীয়দের মানায় না বিকিনি তে। আর ভারতীয়রা খুব কম বিকিনি পরে ঘুরে বেড়ায় মামা।”
পরীর দিকে তাকাল অভি, লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে অভির হাতের কাছে হাত এনে আলতো করে আঙ্গুলে আঙ্গুল থেকায় পরী। অভির হাতে পরীর আঙ্গুলে পরশ পেয়ে যেন ঝলসে ওঠে। পরী ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় মিনতি করে, “দয়া করে থামাও ওকে না হলে কিন্তু আমি চলে যাব।” romantic story
মৈথিলী উঠে বসে আর আদর করে এক থাপ্পর লাগিয়ে দেয় সুব্রতর গালে। গালে থাপ্পর খেয়ে সুব্রত মিউমিউ করে ওঠে কিন্তু বলতে ছাড়ে না, “আরে বাবা আমি কি ভুল বলছি নাকি? ভারতীয় মহিলাদের সাহস নেই ওইরকম সব বিকিনি পরে সি বিচে ঘুরে বেড়ানোর।”
পরী মৈথিলীর চোখ দেখে বুঝতে পারে যে মৈথিলী কিছু লুকাচ্ছে তাই ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার মৈথিলী, তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে তোমার কিছু বলার আছে?”
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না আমার কিছু বলার নেই, ও বড় লজ্জার ব্যাপার আমি বলতে পারব না।”
সুব্রত মৈথিলীর সরু কোমর জড়িয়ে আদর করে ওর কানে কানে বলে, “ডারলিং তুমি না বললে কি আমি বলে দেব?”
অভি বুঝতে পারল যে ওরা গোয়ায় কিছু একটা করেছে যার জন্য মৈথিলী এত লজ্জা পাচ্ছে বলতে। অভি উৎসুক হয়ে উঠলো ঘটনা জানার জন্য আর মৈথিলী কে জিজ্ঞেস করল, “আরে বাবা আমরা এখন বন্ধুর মতন হয়ে গেছি আর লুকিয়ে কি হবে চুরনি, বলে ফেল।”
মৈথিলী জোরে মাথা নাড়ায় আর সুব্রতর কাঁধের পেছনে চেহারা লুকিয়ে নেয়, “না না আমি বলতে পারব না।”
সুব্রত ওর মদের গ্লাস মৈথিলীর ঠোঁটের কাছে এনে বলে, “এক সিপ নিয়ে নাও সোনা দেখবে সব গলগল করে বের হচ্ছে।”
পরী অভির দিকে চোরা চাহনি নিয়ে তাকায় আর মিটিমিটি হাসে।
মৈথিলী সুব্রতর চোখের পানে গভীর ভাবে তাকিয়ে হটাত করে গেয়ে ফেলে,
“আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবিদেখ ফির হোতা হ্যায় কেয়া…আরে দো ঘুট মুঝে ভি পিলা দে সরাবি…”
পরী ওর দিকে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “কি দুষ্টুমি করেছ তোমারা?”
মৈথিলী সুব্রতর গাল দু’আঙ্গুল দিয়ে টিপে বলে, “এই দুষ্টু শয়তানটা আমার জন্যে একটা ছোট্ট লাল রঙের বিকিনি কিনেছিল, আর আমাকে জোর করে একদিন পড়িয়েছিল ওই বিকিনি। আমি বিকিনি পরে বিচে গেছিলাম।”
কথাটা বলেই মৈথিলী লজ্জায় লাল হয়ে যায় আর সুব্রতর কাঁধে মুখ লুকিয়ে নেয়। সুব্রতর হাত উঠে আসে মৈথিলীর চওড়া পিঠের ওপর, মৃদু ভাবে হাত বোলাতে থাকে পিঠের ওপরে। সুব্রত ওর বউয়ের লাজুক মুখ দেখে হাসিতে ফেটে পরে, অভির দিকে তাকিয়ে যেন বলতে চায়, “মামা তোমার বউকেও ওইরকম বিকিনি পরিয়ো দারুন লাগবে মামা।”
অভি পরীর দিকে তাকায়, পরী বুঝতে পারে পভির মনের ভাব। লজ্জায় পরীর মুখ লাল হয়ে ওঠে। অভি জানে যে পরী মরে গেলেও কোনদিন সর্বসম্মুখে ওই রকমের ছোট্ট পোশাক পরে বের হবে না।
অভি যেন ওর নেশাগ্রস্থ চোকের সামনে মৈথিলীর কমনীয় পেলব শরীর টিকে লাল বিকিনি পরে দেখতে পায়। দুই উন্নত সুগোল বক্ষ যেন সেই ছোটো পোশাকের মধ্যে থেকে ফেটে বেড়িয়ে আসছে। পুর পেট অনাবৃত, গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তারপরে ফুলে উঠেছে তলপেটে আর পুরুষ্টু নিতম্বদ্বয়। ছোটো লাল রঙের কোটি আভরন মৈথিলীর নারীত্বের দোরগোড়ায় এঁটে বসে আছে। সুডৌল নিতম্ব বিভাজনের মাঝে ওই ছোটো আভরন হারিয়ে গেছে আর নরম নিতম্ব যেন ওর চোখের সামনে অনাবৃত।
খোলা চোখের সামনে এই ছবি অভিকে পাগল করে তোলে। একবারের জন্য ভাবতে চেষ্টা করে যদি ও নিজে মৈথিলীকে ওই পোশাকে দেখতে পেত তাহলে কি করত। আর ভাবতে পারে না অভি।
সুব্রতর গ্লাস খালি হয়ে এসেছে, সাথে সাথে অভিও গ্লাসের বাকি পানীয় টুকু গলায় ঢেলে নেয়। সুব্রত অভির ফাঁকা গ্লাস দেখে জিজ্ঞেস করে যে আর একটা গ্লাস হবে নাকি, সেই শুনে পরী আর মৈথিলী দু’জনে চেঁচিয়ে ওঠে, না।
সুব্রত অভিকে জিজ্ঞেস করে, “মামা কাল আমরা একটা সিনেমা দেখতে যাব, তুমি আমাদের সাথে যাবে নাকি?”
অভি মাথা নাড়ায়, “না মামা কাল আমার ইলেক্ট্রিকালের প্র্যাক্টিকাল আছে আমি যেতে পারব না মামা। আমি গেলে আমার প্র্যাক্টিকাল পার্টনার আমাকে মেরে ফেলবে।”
অভি পরীর দিকে তাকিয়ে মৃদু মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জানায় যে, ও দুঃখিত যে ওদের সাথে সিনেমা দেখতে যেতে পারবে না বলে।মৈথিলী ওকে বলে, “ঠিক আছে সেটা না হয় হল না, কিন্তু শনিবার আমরা ঢাকুরিয়ায় অমল কাকুর বাড়ি যাব, সেখানে তোমাদের দু’জনকেই যেতে হবে।”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কে অমল কাকু?”
মৈথিলী, “অরুনিমার বাবা, আমি কিছু জানিন, তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছও।”
পরী ওর দিকে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আর মৈথিলী ওর দিকে উৎসুক ভাবে তাকিয়ে। বড় দো’টানার মাঝে পরে যায় অভি, কিছু একটা বলে খান্ত করতে হবে মৈথিলীকে আর পরীকে পরে বোঝানো যাবে।
অভি, “ঠিক আছে, শনিবারের কথা শনিবারে দেখা যাবে।” romantic story
রাত অনেক হয়ে গেছে, সুব্রত মৈথিলীকে সঙ্গে করে বেড়িয়ে যায় অভির ঘর থেকে। পরী ওদের পেছন পেছন বেড়িয়ে যেতে থাকে। অভি দেখল পরী যে ওর কথা রাখছে না তাই পেছন থেকে পরীর কাঁধে হাত রাখে, ইশারায় বলতে চায় যে তুমি তোমার কথা রাখছ না। পরী কাঁধের ওপর থেকে ওর দিকে মিষ্টি করে তাকায়। সুব্রত আর মৈথিলী কিছুটা এগিয়ে গেল। পরী একটু দাঁড়িয়ে রইল তারপরে ওর দিকে তাকিয়ে ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটের সামনে এনে ডগায় আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ওর দিকে নাড়ে, অভি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন টাকে বুকের ওপরে মেখে নেয়।
ভগ্ন হৃদয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে চোখের ইশারায় বলে, “তুমি কথা দিয়েছিলে পরী।”
পরী মাথা নেড়ে চোখের ইশারায় জানায়, “এটা নিয়ে সন্তুষ্ট থাক সোনা।”
এই বলে পরী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।
অভি বিছানার ওপরে শুয়ে পরে, গায়ের ওপরে লেপ টেনে নেয়। ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে অভি, চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরীর লাল ঠোঁট আর মিষ্টি হাসি। চোখ বন্ধ হয়ে যায় অভির।
কিছু নরম জিনিস যেন ওর কপালে ছুঁয়ে যায়। ঘুম ঘুম চোখ খুলে তাকায় অভি, চারদিকে তাকিয়ে দেখে যে ও একটা বিশাল কৃষ্ণচুড়া গাছের নিচে বসে আছে। গাছের সবুজ পাতা রক্ত লাল ফুলের নিচে ঢেকে গেছে, পাতার জায়গায় শুধু লালা ফুল দেখা যাচ্ছে। গাছ থেকে একটা ফুল ওর কপালের ওপরে এসে পরে। ওর চারদিকে কৃষ্ণচুরার লাল ফুল ছড়িয়ে। চারদিকে তাকিয়ে দেখে অভি, গাছটা একটা ছোটো পাহাড়ের ওপরে, আর সবুজ ঘাসে ঢাকা সেই পাহাড়। সামনের দিকে চোখ যায় অভির, ঘাসে ঢাকা পাহাড় নেমে গেছে সমুদ্র তীরে।
ঘন নীল সমুদ্র অবিস্বাস ভাবে শান্ত, এসে মিশেছে পাহাড়ের পাদদেশে। মাথার ওপরের আকাশের রঙ ও ঘন নীল, এক ফোঁটা মেঘের দেখা নেই। দিগন্তের দিকে তাকায় অভি, কোথায় যে সমুদ্র শেষ হয়েছে আর কোথায় যে আকাশ শুরু হয়েছে সেটা ঠিক বোঝা যায় না।
অভি নিজের দিকে তাকায়, পরনে ওর প্রিয় ঘিয়ে রঙের তসরের পাঞ্জাবী আর ধাক্কা পাড়ের ধুতি। ওর সেই ডায়রিটা ওর বুকের ওপরে আধা খোলা অবস্থায় রাখা আর ওপর হাত সেই ডায়রির ওপরে। দিগন্ত থেকে একটা তীব্র সাদা আলো ওর দিকে ধেয়ে আসে। আলোর রস্মি সমুদ্র তীরে এসে থেমে যায়। সেই আলোর ছটা থেকে একটা ছয় ঘোড়ায় টানা একটা বাঁকা চাঁদ বেড়িয়ে আসে। ঘোড়া গুলো অধভুত সুন্দর দেখতে, সবার মাথার ওপরে একটা শিঙ। একটা সুন্দরী জলপরী ওই বাঁকা চাঁদের ওপরে বসে, ওর লম্বা ঘন কালো চুল হাওয়ায় উড়ছে। চুলের দু’গোছা কাঁধের ওপর দিয়ে সামনে এসে জলপরীর উন্নত বুক দুটি ঢেকে রেখেছে।
সেই উন্নত বক্ষের নিচে চোখ যায় অভির, সুন্দর নরম গোল পেটের মাঝে সুগভীর নাভিদেশ, তাঁর নিচে ফুলে উঠেছে সুডৌল নিতম্ব। কোমরের নিচে পায়ের জায়গায় মাছের লেজ। কোমরের নিচে শরীরের নিম্নাগ সোনালি আর রুপলি রঙের মাছের আঁশে ঢাকা। ছয় ঘোড়া বাঁকা চাঁদ টিকে টেনে নিয়ে আঁশে অভির কাছে। জল পরীর মুখের দিকে লক্ষ্য করল অভি, এযে তাঁর প্রেমিকা পরীর মুখবয়াব। পরী ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে, দু’হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দেয় আলিঙ্গনে আহ্বান জানায় অভিকে।
কাজল কালো চোখ দুটি বড় বড় হীরের মতন জলজল করছে। হাসিতে গালে টোল পড়েছে। চুলের এক গোছা ওর বাঁ গালের ওপরে এসে পড়েছে, দেখে মনে হল যেন চাঁদ এক চিলতে মেঘের আড়ালে লুকচুরি খেলে বেড়াচ্ছে। অভি জলপরী, পরীর দিকে তাকিয়ে হাসল আর উঠে চলে গেল ওর দু’বাহুর মাঝে। অভিকে জড়িয়ে ধরল পরী, পরীর প্রেমের আলিঙ্গনে অভি হারিয়ে গেল।
আগের পর্ব